রাজশাহীতে তরণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে গণধোলাইয়ে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগের আরও দুই কর্মী। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করে জনতা।
গত পাঁচ আগস্ট এক তরুণীকে সরকার পতনের আন্দোলন থেকে তুলে নিয়ে রাজশাহীর পঞ্চবটী মন্দিরে গণধর্ষণ করার পর হত্যার অভিযোগ ওঠে। সেখানকার মানুষের ধারণা, পরে ওই তরণীর লাশ পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ সরকারের নেতৃত্বে তার বাহিনী এমন নৃশংস্য ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
এখন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর পরিচয় মেলেনি।
শনিবার বিকেলে এই অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলো এমন একজনের তথ্য নিশ্চিত করে তার অবস্থান শনাক্ত করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পরে সানি নামের ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দুর্গমচর এলাকা থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়। এমন সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ও শিক্ষার্থীদের গণধোলাইয়ের শিকার হন সানি।
ছাত্র-জনতার গণধোলাইয়ের মুখে তৎক্ষণাৎ ধর্ষণ ও হত্যার ব্যাপারটি স্বীকার করে নেন সানি। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ‘কটা’ নামের আরেক যুবকের তথ্য পায় শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা কটা নামের ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে রাজশাহী শহরের আলুপট্টি এলাকা থেকে খুঁজে বের করে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে একপর্যায়ে দৌড়ে সে নদীতে ঝাপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তবে, শিক্ষার্থীরা সাঁতরে কটাকে ধরে গণপিটুনি দেয়।
গণপিটুনির পর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য অভিযুক্তদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় তাদেরকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়। এ সময়ে থানার সামনে অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে শ্লোগান তোলে।
ওইদিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে নগরীর বিনোদপুর থেকে মাসুদ নামের অন্য আরেকজন ছাত্রলীগ নেতাকে ধরে নিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। তার বিরুদ্ধেও ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ তুলেছে ছাত্র-জনতা।
মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।
তাদের গণধোলাইয়ের শিকার এই মাসুদই পরবর্তীতে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত সানি ও কটা পুলিশের কাছে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত আট জনের নাম জানিয়েছে।
পুলিশকে এমন তথ্য দিলেও এ ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তারা।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার সাংবাদিকদের জানান, পাঁচ আগস্টের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর লাশ ভাসিয়ে দেয়ার ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন তারা। তবে, নিশ্চিত হতে না পারায় তখন তা গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেন।
ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই তরুণীর পরিচয় নিয়ে তিনি বলেন- ‘হয়তো অভিভাবক লজ্জায় এমন ঘটনা প্রকাশ করেনি, তাই মেয়েটির পরিচয় পাওয়া যায়নি।’
বোয়ালিয়া থানার ওসি এস এম মাসুদ পারভেজ জানান, পাঁচ আগস্টের এমন কোনো ঘটনা তার জানা নেই। এমনকি এই বিষয়ে কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগও পাননি বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: