অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ ওঠেছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কায়েমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামছুল হুদার বিরুদ্ধে । এ ছাড়াও খামারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে এই প্রধান শিক্ষক স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সনদপত্র বাবদ চাঁদা আদায় ও আর্থিক অনিয়ম করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে নিজ পরিবারের লোকজনকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ১০৫ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়টিতে ভর্তি থাকলেও মাত্র ৩২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত আছেন। সেইসঙ্গে স্কুল ক্যাম্পাস ছিল অগোছালো ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রধান হিসেবে কায়েমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন সামছুল হুদা। এরপরে থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ না করে নিজের আর্থিক লাভের দিকে নজর দেন। এজন্য নিজের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেন তিনি। এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৯ জন শিক্ষক ও কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ জন শিক্ষক ও ৬ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে চাকরীরত। এর মধ্যে গত ২০১৭ সাল ও ২০২৩ সালে দুই দফায় চতুর্থ শ্রেণীর ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।
নিয়োগ পাওয়াদের পরিচয় সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক জানান, আয়া পদে প্রধান শিক্ষকের চাচী ইয়াসমিন আক্তার, নৈশ্য প্রহরী পদে চাচাতো ভাই ওমর ফারুক ও অফিস সহকারী পদে শ্যালক মজনু ইসলামকে নিয়োগ দেন। এ ছাড়াও নিজের পছন্দের ব্যক্তি রাকেশ রায় কে লাইব্রেরীয়ান পদে নিয়োগ দেন। সমঝোতার মাধ্যমে সাবেক অর্থ মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রার্থী মঞ্জরুল ইসলাম ও ঐ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামের ভাই শাহাদাত হোসেনকে নিয়োগের বিষয় নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে নিজের দলীয় পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে পরিবারতন্ত্রে রুপান্তরিত করেন প্রধান শিক্ষক সামছুল হুদা। প্রতিষ্ঠানের সবশেষ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর নিয়োগে প্রায় সবগুলো নিজের পরিবার থেকেই তিনি নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের ব্যবহার করা কম্পিউটার, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সনদপত্র বাসায় রাখেন এই প্রধান শিক্ষক। কোনো সাবেক শিক্ষার্থীর সনদপত্র প্রয়োজন হলে বাসায় গিয়ে টাকা দিয়ে সনদ নিতে হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
অবসরপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হাফিজ উদ্দিন জানান, আমি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছি। সুন্দর ভাবে বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম সচল ছিল ও অনেক ছাত্র-ছাত্রী ছিলো। এই প্রধান শিক্ষক আসার পর থেকেই বিদ্যালয়ের করুণ দশা শুরু হয়েছে। নিজের পরিবারের লোকজনকে নিয়োগ দিয়ে মনগড়া ভাবে স্কুল পরিচালনা করছে যা দু:খজনক।
কায়েমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামছুল হুদা স্বজনপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগে আমার পরিবারের সদস্য ও সভাপতির ভাই নিয়োগ পেলেও তাদের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে না পেরে বলেন, অভিভাবকদের অসচেতনতায় উপস্থিতি অনেক কম।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঐ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. তাজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হলাম। ঘটনার সত্যতা কিংবা লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: