রবিবার

২৪ নভেম্বর, ২০২৪
৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
২২ জামাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ

কুষ্টিয়া সদর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১৬:২৬

শেয়ার

নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ।ছবি: বাংলা এডিশন

কুষ্টিয়ার জুগিয়ায় গড়াই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। মঙ্গলবার সকালে বালুবাহী বেশ কয়েকটি ট্রাক আটকে রাখেন। এরপরে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুগিয়া কানাবিলের মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধের ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে যানজট লেগে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সড়কের যাত্রীরা। পরে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে সড়ক ছেড়েছে বিক্ষোভকারীরা। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে  প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে আগামী দিনে আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন  বিক্ষোভকারীরা।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভে বক্তারা বলেন, গড়াই নদী থেকে বহু বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। এতে জুগিয়া এলাকার রাস্তা ও নদী ভাঙ্গন হয়। রাস্তার ধুলাবালি আমাদের ঘরবাড়িতে চলে আসে। বালুবাহী গাড়ির শব্দে এই এলাকার মানুষ ঘুমাতে পারতো না। এতে চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে অসময়ে নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। এজন্য আমরা দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।

তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বালু উত্তোলন করতো। তাদের ভয়ে আমরা কথা বলতে পারিনি। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হতো। তারা বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতার দেখিয়ে বালু উত্তোলন করেছে। ৫ আগস্ট তীব্র গণ-আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায় তারা। এরপর থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারও শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মহিদুল ইসলাম কয়েকদিন আগে থেকে আবারও বালু উত্তোলন শুরু করেছে। আমরা এলাকাবাসী বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে কয়েকটি বালুবাহী ট্রাক আটকে রাখি এলাকায়। এরপর মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। পরে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন পুলিশের কর্মকর্তারা। এরপর আমরা ট্রাক ছেড়ে দিয়েছি, সড়ক ছেড়ে দিয়েছি। এ সমস্যা সমাধান না হলে আমরা আগামীতে আরও আন্দোলন করবো।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু রাসেল। তিনি বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। বর্তমানে ওই এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় পদ্মা-গড়াই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছেই। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ক্ষমতার হাতবদল হয়ে আবারও শুরু হয়েছে সেই অবৈধ বালু উত্তোলন। কুষ্টিয়ায় পদ্মা-গড়াই নদীতে বছরের পর বছর ধরে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। ইজারা বন্ধ থাকলেও বালু উত্তোলন করা হয়। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হতো বছরের পর বছর ধরে। ইজারা বন্ধ থাকলেও কুষ্টিয়ায় পদ্মা-গড়াই নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। এতে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। গত ১০ বছরে সরকার অন্তত ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে বলে জানা গেছে।

জেলার ২১টি বালুমহাল থেকে দিনে অন্তত পাঁচ লাখ ঘনফুট মোটা বালু তোলা হতো। এসব বালু খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। অভিযোগ উঠেছে, নতুন করে বালুরঘাট ও নদী দখল করে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করেছে প্রভাবশালীরা। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার মিরপুরে ও কুমারখালীতে অবৈধভাবে বালুরঘাট দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন কুষ্টিয়ার সাবেক  সংসদ সদস্যরা সহ জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। তাদের সিংহভাগই হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া আত্মগোপনে আছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দলীয় শীর্ষ পদধারীরা। বর্তমানে তাদের সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারাই মূলত কুষ্টিয়ার বালুচক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। ৫ আগস্টের পর তারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। এরপর বেশ কয়েকদিন ধরে  প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বালুমহালের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই কুষ্টিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কুষ্টিয়ার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু তোলার মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷

এ বিষয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বা কোনো অপরাধ করলে দল তার দায় নেবে না। কেউ যদি অন্যায় অনিয়ম করে, তার দায় তাকেই নিতে হবে। বিএনপি কারো অপকর্মের বা অপরাধের দায় নেবে না।

কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. শারমিন আখতার বলেন, অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে জেল জরিমানা করা হয়েছে৷ যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।