কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও কয়েকজনের বিরুদ্ধে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের ইট-রড খুলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এখনো রড-ইট খুলে বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বাবলু মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপি নেতার নাম মহুবর রহমান। তিনি বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য। মহুবর রহমানের সহযোগী হিসাবে খুদিরকুটি আবদুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও নুর ইসলাম ইট-রড বিক্রির সাথে জড়িত বলেও জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ মাসের শুরুতে উজানের ঢলে ধরলা নদীর পানির স্রোত বেড়ে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। এ সময় নদীভাঙনে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের খুদিরকুটি আবদুল হামিদ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের একাংশ নদীতে ভেঙে পড়ে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের বাকি অংশ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ও তার সহযোগিরা মিলে দরপত্র ছাড়াই বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের ইট-রড খুলে বিক্রি শুরু করে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দুপুরে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের খুদিরকুটি আবদুল হামিদ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র এলাকায় গিয়ে ৯ জন শ্রমিককে গ্রান্ডিং মেশিন দিয়ে রড কাটতে এবং ইট সরিয়ে অন্য জায়গায় নিতে দেখা যায়। এছাড়া ওই সময়ে খুদিরকুটি আবদুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ডিজিটাল স্কেলে মেপে রড বিক্রি করে অভিযুক্ত রাশেদুলকে খাতায় রড বিক্রির টাকার হিসাব করতেও দেখা যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধরলা নদী ভাঙন শুরু হয়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের একাংশ ভেঙে পড়লে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহুবর রহমান ও তার অনুসারীরা মিলে আশ্রয় কেন্দ্রের প্রায় ৫০ হাজার ইট, বড় দরজা ৭টি, গ্রীলসহ জানালা ১৫টি, বড় কেসি গেট ১টি, ছোট জানালা ৪টি, ২০ মণের বেশি রড ও আশ্রয় কেন্দ্রের রাবিশ কোনো ধরনের দরপত্র ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই প্রতি হাজার ইট ৫ হাজার টাকা, রড প্রতিমণ ১ হাজার ৮৫০ টাকা ও রাবিশ প্রতি গাড়ি ৩০০ টাকা করে বিক্রি করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই তাদের কাছ থেকে ইট, রড ও রাবিশ কেনেন।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাবলু মিয়া বলেন, 'ধরলার ভাঙনে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের একাংশ ভেঙে গেলে স্থানীয় কিছু মানুষ বাকি অংশ থেকে রড,ইট খুলে বিক্রি শুরু করে। পরে গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি আমাকে জানালে আমি সরেজমিনে গিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য মহুবর রহমানসহ যারা এই কাজে জড়িত তাদের রড ও ইট বিক্রিতে বাধা দেই। এ সময় তারা আমাকে জানায়, আমাদের জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প ছিলো, তাই আমরা খুলে নিয়ে যাচ্ছি। পরে সেখান থেকে ফিরে এসে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি।'
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, 'কোনো দরপত্র ছাড়া বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের ইট-রড বা সরকারি কোনো সম্পত্তি কেউ বিক্রি করতে পারবে না। আমি অভিযুক্তদের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা সেগুলো খুলে স্কুল মাঠে জমা করার কথা বলেছিলো।'
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো জানান, 'স্থানীয় প্রশাসন ছাড়া কেউ ওই সম্পত্তি খুলতেও পারবে না। আমি খোঁজ নিচ্ছি।'
আরও পড়ুন: