সরকারের ৫১ শতাংশ মালিকানাধীন থাকা এক সময়ের লাভজনক ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) এখন রয়েছে ভয়াবহ অর্থ সংকটের মুখে। কোম্পানির শূন্য তহবিল আর শ্রমিক অসন্তোষে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে।
নিজস্ব তহবিলে কোনো টাকা না থাকায় এনটিসির ১২টি চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি-ভাতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বন্ধ রয়েছে ৮ সপ্তাহ ধরে। বকেয়া মজুরির দাবিতে ১৩ দিন ধরে চলছে শ্রমিক কর্মবিরতি। এমন পরিস্থিতিতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে এসব বাগানে চায়ের উৎপাদন।
এনটিসির ১২টি বাগান হচ্ছে হবিগঞ্জ মাধবপুরে তেলিয়াপাড়া চা বাগান, জগদীশপুর চা বাগান; চুনারুঘাটের চন্ডীছড়া, পারকুল; মৌলভীবাজারের বিজয়া, প্রেমনগর, খুরমা, চাম্পারায়, মদনমোহনপুর পাত্রখোলা এবং মাধবপুর ও সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান।
পাওনা আদায়ের দাবিতে বাগানের শ্রমিকরা প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে সেগুলো সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে টাকার জোগাড় না থাকায় শ্রমিকদের বকেয়া তলব, রেশন প্রদান সবই বন্ধ রয়েছে। কিছুতেই সমস্যার সমাধান খুঁজে না পেয়ে হতাশ কর্তৃপক্ষও। উপায় না থাকায় শ্রমিকদের দাবি ও কর্মবিরতির মুখে কোম্পানির বাগানগুলো বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চা পাতা সংগ্রহের সময় লাগাতার বাগান বন্ধ থাকায় আগামী অর্থবছরে আরও বেশি লোকসান হওয়ার আশঙ্কার সম্ভবনা রয়েছে।
এদিকে এসব বাগানে ১৭ হাজার নিয়মিত শ্রমিকসহ প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। বকেয়া মজুরি ও কাজ বন্ধ থাকায় চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।
কোম্পানির দাবি, চায়ের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তবে নিলাম বাজারে চায়ের বিক্রি খুব একটা বাড়েনি। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবছরই লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে বাগানগুলোকে। লোকসান বেশি হওয়ায় কৃষি ব্যাংকও ঋণ দিচ্ছে না; যাতে করে শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ।
জগদীশপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা সন্তোষ মুন্ডা জানান, চা বাগানে শ্রমিকদের কম মজুরিতে কাজ করতে হয়। বর্তমান বাজারে এই মজুরিতে সংসার চালানো কঠিন। এখন তাদের অর্থনৈতিক সংকট চরমে। সেই সঙ্গে বাগানগুলোর যে পরিস্থিতি তাতে অনেক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। টাকার ঘাটতির কথা বলে ১৩ দিন ধরে বাগান বন্ধ থাকায় সাধারণ শ্রমিক পরিবারে এখন তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভোজন কৈরি জানান, লোকসান ও ঋণের অজুহাত দেখিয়ে ১২টি চা বাগানে কোম্পানির লোকজন মজুরি ও রেশন দিতে পারছে না। অনেক বাগানে আগের মজুরি বকেয়া। বাগানগুলোর প্রতি সরকারের নজর দেওয়া দরকার।
এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক জানান, প্রতিবছর আগস্ট মাসে কৃষি ব্যাংক বাগানের ঋণ মঞ্জুর করে থাকে। এ বছর দেশে চলমান পরিস্থিতির কারণে কৃষি ব্যাংক ঋণ অনুমোদন ও ছাড় দিচ্ছে না। টাকা ছাড়ের ব্যাপারে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ চেষ্টা করছে। টাকা পেলেই শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।
আরও পড়ুন: