সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলায় ভোর থেকে শুরু হয় টিলা কাটা। কয়েকশো মানুষ টিলার বুক চিরে বের করে নিয়ে আসে সিঙ্গেল, ভুতু আর বোল্ডার পাথর। ঐতিহ্যবাহী শাহ আরেফিনের মাজারে প্রতিদিন চলছে এমন ধ্বংসযজ্ঞ। ধ্বংসকারীরা এতটাই স্মার্ট যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান আসার আগেই তারা খবর পেয়ে যান। মুহুর্তের মধ্যে ফাঁকা হয়ে যায় পুরো শাহ আরেফিন টিলা। অভিযানে দুই একদিন পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও নতুন করে শুরু হয় পাথরখেকোদের হিংস্র থাবায়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন এখানে কখনো মানুষের পা পড়েনি। তবে পাশে গেলেই তাদের ধ্বংসের ক্ষতচিহ্ন ভেসে ওঠে। প্রায় ৩ মাস ধরে শাহ আরেফিনের মাজার থেকে পাথর উত্তোলন করে প্রায় ধ্বংসের পথে পুরো মাজার।
এমন ভয়াবহ দৃশ্য পাথর লুট ও পাথরখেকোদের হিংস্র থাবায় শাহ আরেফিন টিলা মাজার ধ্বংস করা হচ্ছে নিয়ে বাংলা এডিশনের ধারাবাহিক অনুসন্ধানে ওঠে আসে এমন দুর্দান্ত লুটপাটের তথ্য। এরই ধারাবাহিকতা খবর প্রকাশের পরে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়।
মঙ্গলবার শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। অভিযানে ৪ জনকে আটক করে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। সেদিন বেলা ১টা থেকে বিকাল পর্যন্ত শাহ আরেফিন টিলা ও ভোলাগঞ্জে পাথর ভাঙ্গার মেশিনে অভিযান চলে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানসহ সঙ্গীয় ফোর্স।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর মাজার থেকে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় পাথর উত্তোলন ও পরিবহনের সাথে জড়িত থাকায় ৭ জনকে আটক করে মামলা করে পুলিশ। এরপর ২দিন পর্যন্ত বন্ধ ছিল পাথর উত্তোলন। বর্তমানে আগের ন্যায় আবারও পুরোদমে শুরু হয় টিলা কেটে পাথর উত্তোলন।
বাকি পর্ব পড়ুন:
পর্ব ১: সিলেটের শাহ আরেফিন টিলায় বালু-পাথর লুটপাট
পর্ব ২: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে শাহ আরেফিন টিলায় পাথর খেকোদের হিংস্র থাবা
পর্ব-৩: পাথর খেকোদের ছোবলে শাহ আরেফিন (রহ.) মাজার
পর্ব-৪: দেশের একমাত্র ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ পাথরখেকোদের পেটে
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ প্রায় ১ বছর থেকে থেমে থেমে শাহ আরেফিনের মাজার সংলগ্ন মাঠ ও কবরস্থান থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হলেও গেলো তিন মাস ধরে বিরতিহীন ভাবে চলছে পাথরখেকোদের ধ্বংসযজ্ঞ। পাথর উত্তোলন করে প্রায় বিলীন করে দেয়া হয়েছে মাঠ ও কবরস্থান। সেখান থেকে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকার পাথর তুলে বিক্রি করা হয়েছে। তাছাড়া সেখানকার কয়েকশো গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে শাহ আরেফিনের মাজার থেকে পাথর উত্তোলন নিয়ে জালিয়ারপাড় ও চিকাডহর-নারাইনপুর গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। চিকাডহর-নারাইনপুরের বাঁধা উপেক্ষা করে মাজার থেকে পাথর উত্তোলন করায় দুই গ্রামের মধ্যে যে কোন সময় সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তবে, উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের পর পাথর উত্তোলন বন্ধ ২ দিন ছিল বলে নিশ্চিত করেন স্থানীয় কয়েকজন। আর আগামীতে এমন অভিযান চালানো হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের মধ্যে। আগের মতো স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করতে না পারলে পাথর চুরি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেও জানান তারা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা জানান, শাহ আরেফিন টিলা থেকে ২ জন ও ভোলাগঞ্জের ক্রাশার মিল থেকে ২ জনকে আটক করে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাছাড়া বালু পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে।
আরও পড়ুন: