গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় ইউনিয়নের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের কৃতকর্মের কারণে, জনগণের নির্বাচিত ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের জন্য কাজ করলে দেশের পরিবেশ প্রতিকুল হলেও যে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় তারই দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে উপজেলার ধুম ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং থেকে পরপর তিন বারের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য আনোয়ারা বেগম।
উপকারে অগ্রণী ভূমিকা রাখলেও নিজের জন্য কিছুই করেননি তিনি। জরাজীর্ণ ছোট্ট কুটিরে কোন রকম জীবনযাপন করছেন। অন্যের দুঃখের খবর পেলে তীব্র রোদ কিংবা ঝড়তুফান কিছুই থামাতে পারে না তাকে, যেন ঝড়ের গতিতেই মধ্যরাত হলেও ছুটে যান জনগণের প্রয়োজনে।
২০১১ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। সেই ধারায় পরপর তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন আনোয়ারা বেগম। তবে কোন দলীয় সমর্থনে নয়, সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচিত হন। এর জন্য বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে তাকে।
সারেজমিনে দেখা যায়, ১৫ বছরের টানা মেম্বারের দায়িত্বে থাকা মনোয়ারার ঘরের খুবই বেহাল দশা। ঘরের চারপাশে বাঁশের তৈরি বেড়া, খুটিগুলোও বাঁশের তৈরি। বড় কোন দুর্যোগ হলে ঘরটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ার অবস্থা। নেই ভালো টয়লেট, রান্নার ঘরের করুণ অবস্থা পরে লোন নিয়ে কোন রকম একটি রান্না ঘর তৈরি করেছেন। মনোয়ারার কোন ছেলে নেই, তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বাড়ির অঙ্গিনার জমি বিক্রি করে।
স্থানীয় শাহেনা আক্তার বলেন, তিনি গত ১৫ বছর মেম্বারি করে আসতেছেন। কখনও কারো ক্ষতি করেননি। সবার উপকার করেছেন। তার কোন ছেলেও নেই, তিনটা মেয়ে। ওনি মানুষের অনেক ঘরের জন্য সহযোগিতা করেছেন, তবে নিজের ঘরটাও করেননি।
স্থানীয় মোহাম্মদ শওকত জানান, আনোয়ারা বেগম গত ১৪ বছর ধরে সুনামের সাথে মেম্বারি করে আসছেন। তিনি কখনও কোন দলীয় ছিলেন না। তিনি সৎ এবং গরীব হওয়াতে সবাই ওনাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। তার বিপক্ষ প্রার্থীরা অনেক ভাবে চেষ্টা করেও তাকে হারাতে পারেনি।
স্থানীয় জামায়াত কর্মী আরাফাত জানান, নির্দলীয় ও অসাধারণ সহযোগিতা সম্পন্ন মানসিকতার জন্য জনগন বার বার মেম্বার বানিয়েছেন। বিগত এত বছরে ক্ষমতায় থাকার পরও এই ভাঙা কুড়ে ঘরে দিনযাপন করেন। এখান থেকে জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
আনোয়ারা বেগম জানান, আমি দীর্ঘ ১৫ বছরের কাছাকাছি সময় মেম্বারি করছি। আমার হাতে যাই আসে আমি কখনও কিছু রাখিনি, সব জনগণকে দিয়ে দিয়ে। আমি তিনটা মেয়ের বিয়ে জমি বিক্রি করে দিয়েছি। একটা মেয়ের জামাই অসুস্থ। আমি কখনও বাজেট কিংবা টিআর কোন কিছুর লোভ করিনি। আমি এত বছরের মেম্বার, তবে আমার ভাঙা ঘর দেখে সবাই হাসে। আমি লোভ করলে সব কিছু করতে পারতাম। আমি ভোটে দাঁড়াইতাম লোন নিয়ে। এখন একটা ঘরের খুবই প্রয়োজন তবে নিজে যে ঘর দিবো সে সামর্থ্য নেই।
আরও পড়ুন: