কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যানজটের নেপথ্যে লোকাল বাসগুলো। বিশেষ করে, উখিয়া উপজেলার প্রধান সড়কের ব্যস্ততম স্থানগুলোতে যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ এই বেপরোয়া গতির বাসগুলো। সড়কের 'ব্যাড বয়'-খ্যাত এই বাসগুলোর ভূমিকা অনেকটা বিষফোড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নেই নির্দিষ্ট বাস-স্টপেজ, পার্ক; নেই কোনো শৃঙ্খলা। 'ওস্তাদ বাঁয়ে চেপে ডানে' বলে হুটহাট 'উড়ে এসে জুড়ে বসে' সড়কের মাঝখানে থেমে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করায় এই গণপরিবহন।
কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উখিয়া উপজেলার অংশজুড়ে সড়কে নানা অসংগতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। লোকাল বাসগুলো এর মধ্যে অন্যতম। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রী ও অন্যান্য ছোট-মাঝারি যানবাহনের চালকেরা।
উপজেলার মরিচ্যা এলাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক শাহজাহান মিয়া; দীর্ঘ ২১ বছর ধরে গাড়ি চালান। তিনি বলেন, অতিষ্ঠ করে তুলেছে লোকাল বাসগুলো। সড়কের মাঝখানে থেমে যাত্রী ওঠানামা করায় এরা। ট্রাফিকের কোনো আইনকানুন তারা মানে না।
একই ভাষ্য ফরিদ উল্লাহ ও ইয়াকুব নামের অপর দুই সিএনজি-চালকের। তারা বলেন, বাসের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই একমুখী সড়কের দু-পাশে দুটি বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করলে নিশ্চিত জ্যাম লেগে যায়।
সাধারণ যাত্রীরা বলেন, একটি আরেকটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রী তুলতে গিয়ে জ্যামের সৃষ্টি হয়। বাসচালকেরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না বলে বিশৃঙ্খলা হয়। বাসগুলোর বেপরোয়া গতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া, দীর্ঘ যানজটের কারণে প্রতিদিন কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। সবমিলিয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, এমনটাই দাবি তাদের।
জবাবে বাস-সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। যানজট সৃষ্টির জন্য তারা দুষছেন ছোট যানবাহনগুলোকে। অপরদিকে, বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য গণপরিবহনকে দুষছে ছোট যানবাহনগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পায়রা বাস সার্ভিস, বলাকা, জনতা, এস.এম পরিবহন, সীমান্ত পরিবহন, পালকী, কক্স-ট্রাভেলস, সমুদ্রতরী, সরাসরি স্পেশাল সার্ভিস, বুলবুল ট্রাভেলস, পালং স্পেশাল সার্ভিস, সৈকত ট্রাভেলস-সহ বিভিন্ন নাম-বিশেষণে শতাধিক লোকাল বাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই সড়কে।
বেশির ভাগ বাসই ফিটনেসবিহীন। নেই মানসম্মত যাত্রীসেবা। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোদ বাসের যাত্রীরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসের সামনে-পেছনে 'কক্সবাজার টু টেকনাফ' লেখা থাকলেও বেশির ভাগ বাসগুলো ছাড়ে পালংখালী, জামতলি, থাইংখালী, মরাগাছতলা, বালুখালী, কুতুপালং বাজার এলাকা থেকে। কিছু বাস 'ক্লোজ ডোর' বলেও যত্রতত্র যাত্রী ওঠা নামা তাদের প্রতিদিনের চিত্র। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে নিরুত্তর থাকেন চালক-হেলপারেরা।
অভিযোগ আছে, সচেতন যাত্রীর অভাবে রোহিঙ্গা যাত্রীদের টার্গেট করে চলছে বাসগুলো। শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের বেরিয়ে পড়ার খবর কারও অজানা নয়। শ্রমবাজার দখলে নেওয়া রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ ছাড়া জরুরি হাসপাতালগমন এবং নানান উদ্দেশ্যে ছলেবলে কাঁটাতার টপকানো রোহিঙ্গারা যানবাহনে গন্তব্যে পৌঁছায়। এমন যাত্রীদের টার্গেট করে বাসগুলো। দেশে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণে বাস-সংশ্লিষ্টদেরও দায়ী করা হয়।
তবে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে পারছে না রোহিঙ্গারা। উখিয়া স্পেশালাইজড হসপিটাল-সংলগ্ন এলাকায় প্রধান সড়কে সেনাবাহিনী ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের যৌথ তল্লাশি চৌকিতে দলে দলে ধরা পড়ছে রোহিঙ্গারা৷ জাতীয় পরিচয়পত্র শনাক্ত করে বাস ও অন্যান্য পরিবহন থেকে নামিয়ে ফেলা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের।
জানতে চাইলে ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে পুলিশ। বাস ও বিভিন্ন পরিবহন থেকে আটক করা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প-প্রশাসনের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পের ইনচার্জদের (সিআইসি) মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্ব-স্ব ব্লকে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বাস-নৈরাজ্যের বিষয়ে কথা বলতে কক্সবাজার জেলা কোচ, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
সড়কের বিশৃঙ্খলা নিয়ে জানতে উখিয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) নারায়ণ দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সম্প্রতি বদলিজনিত কারণে ঢাকায় অবস্থান করছেন। নতুন করে যোগদান করা কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: