বৃহস্পতিবার

২১ নভেম্বর, ২০২৪
৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
১৯ জামাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

এমপি হানিফের পিএস ও তার স্ত্রীর শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১৪:৪২

আপডেট: ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১৫:৪০

শেয়ার

এমপি হানিফের পিএস ও তার স্ত্রীর শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়
ছবি : কোলাজ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের সাবেক পিএস ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন রাজু ক্ষমতার অপব্যবহার করে শতকোটি টাকার অবৈধ  সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

আওয়ামী লীগ শাসনামলে  চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডরবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী মূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, ঢাকা, গাজীপুর, সিলেটসহ দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আলিশান ফ্ল্যাট, প্লট সহ অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। তার অর্জিত অবৈধ সম্পদের অধিকাংশই তার স্ত্রী রেবা খাতুন ও বিভিন্ন নামে-বেনামে করেছেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আমজাদ হোসেন রাজু কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন নেতা। সে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং বিশ্বাসী ছিলেন। সেই সুযোগকে কাছে লাগিয়ে রাজু কুষ্টিয়া জেলা ব্যাপী অস্ত্র ও মাদকের সবথেকে বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। এছাড়াও হানিফ এমপির পক্ষে তিনি এবং সাবেক এমপি হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা জেলার চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডরবাজি নিয়ন্ত্রণও করতেন। কুষ্টিয়া পদ্মা ও গড়াই নদীতে বছরের পর বছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলনের মূল্য হোতাদের অন্যতম ছিলেন রাজু। হানিফ এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় খোকসা থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত পুরো জেলায় এজন্টের মাধ্যমে ভয়বীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেছে প্রায় একযুগ। হানিফ এমপির আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেনি কোন দিন। গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আত্নোগোপনে চলে যান রাজু।

রাজু ও তার স্ত্রীর ব্যবসা এবং সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজারের টিসিবি ভবনে আমজাদ হোসেন রাজুর মালিকানাধীন অর্নব ট্রেডিং এবং ম্যাট্রেক্স ক্যামিকেল নামের দুইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কুষ্টিয়ার মঙ্গলবাড়ীয়া বাজারে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে তার রয়েছে নগদের এজেন্ট ব্যবসা। কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের সামনে তার কয়েক কোটি টাকার ইলেট্রনিক্স পণ্যের শোরুম।

সুত্র বলছে, কুষ্টিয়া এবং ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকয় রাজু ও তার স্ত্রী রেবা খাতুনের রয়েছে বিলাসী এপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট। ঢাকার ৬৯ নং গ্রীন রোডে (কমফোর্ট এর বিপরীতে) লিফটের ১১ এ ২ কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট, ১২৫ কলাবাগান লেক সাকের্লে (লিফট এর ৬) ৩ কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট, কুষ্টিয়ায় ছয় রাস্তার মোড়ে ফয়সাল টাওয়ার ২২ এ রয়েছে আরও একটি ফ্ল্যাট।

ক্ষামতা অপব্যবহার করে অবৈধ পন্থায় আমজাদ হোসেন রাজু কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বেশ কয়েকটি দোকান। যার মধ্যে- কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ মার্কেটে একটি, বটতৈল জেলা পরিষদ মার্কেটে একট, দৌলতপুর জেলা পরিষদ মার্কেটে একটি দোকান।

এছাড়াও প্রভাব খাটিয়ে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আমজাদ হোসেন রাজুর কুষ্টিয়ার শহরের প্রাণ কেন্দ্র পরিমল টাওয়ারে দুইটি দোকান এবং ভেড়ামারা কাঠের পুলে একটি দোকান।

অবৈধ টাকা দিয়ে রাজু নিজের নামে, তার স্ত্রী রেবা খাতুনের নামে এবং নামে বেনামে রয়েছে সম্পত্তি। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলার আঠিবাজার হাউজিংয়ে কিনেছেন ৮ কাঠা জমি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। ঢাকার গাজীপুরে ১ বিঘার প্লট। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা। কুষ্টিয়া দৌলতপুরে রয়েছে ১০ বিঘার উপর বিশাল এক আম বাগান। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এছাড়াও ভেড়ামারায় হীরিনদী তীরবর্তী গোরস্থানের পাশে ১০ কাঠার আম বাগানও রয়েছে তাদের।

আমজাদ হোসের রাজুর আরও বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মিরপুর ১ নম্বরের মিসকো সুপার মার্কেটে এসএস প্রিন্টিং নামের গার্মেন্টস রয়েছে তার। যা তিনি ভেড়ামারার টাক বাবলুর সাথে ৫০ শতাংশ যৌথ মালিকানায় গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও ভেড়ামারার আশরাফুল এবং জনতা ব্যাংকে চাকুরীরত ব্যাংকার ভাইরাভাই চঞ্চলের সাথে তার রয়েছে ঠিকাদারী ব্যবসা। নাসির গ্লাস কোম্পানীর সাথেও তার রয়েছে বালি সাপ্লাই ব্যবসা।

যৌথ অংশীদারিত্বে বরো আউলিয়ার দেশ সিলেটেও রয়েছে একটি আধুনিক মার্কেট। যার পার্টনার হিসাবে রয়েছেন সিলেটের স্থানীয় মাসুম নামের এক ব্যবসায়ী। ঐ মার্কেটের রাজু ৩০ শতাংশের মালিক বলে জানা গেছে।

কুষ্টিয়ার পদ্মা এবং গড়াই নদীতে বালু ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য তার রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের নৌকা এবং তিনি নিজের ব্যবহারের জন্য টয়োটা কোম্পানীর নোহা স্কায়ার মডেলের যে গাড়ী ব্যবহার করেন সেটির দাম অন্তত ৬৫ লাখ টাকা।

এছাড়াও কোটি কোটি টাকা ব্যবসায়িক অংশীদার হিসাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লগ্নি করেছেন বলেও জানা গেছে। তার  চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডরবাজি, মাদক ও অস্ত্রব্যবসার বিষয়ে কুষ্টিয়ার সুধী সমাজ প্রশাসনের দৃষ্টি অকর্ষন করেছেন। সেই সাথে তার অবৈধ সম্পদের সুষ্ঠ তদন্তে দুদুকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে আওয়ামীগ শাসন আমলে তার সকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করেছেন।

৫ আগস্টের পর থেকে আমজাদ হোসেন রাজু পলাতক থাকায় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার এসব সম্পদের বিষয়ে তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়াও তার ব্যবসায়ী পার্টনার সিলেটের মাসুম এবং ব্যাংকার ভাইরাভাই চঞ্চলের মঠোফোনে ফোন দিলে তারাও ফোন রিসিভ করেন নাই।