বুধবার

২৭ নভেম্বর, ২০২৪
১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
২৫ জামাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

সংস্কৃতি ও মায়ের ভাষা রক্ষায় যুবক ছুটছেন গ্রামের পর গ্রাম

নেত্রকোণা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১৫:৩৮

শেয়ার

সংস্কৃতি ও মায়ের ভাষা রক্ষায় যুবক ছুটছেন গ্রামের পর গ্রাম
মায়ের ভাষা চর্চায় অন্তর হাজং। ছবি: বাংলা এডিশন

অন্তর হাজং পেশায় একজন ছাত্র। তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মাস্টার্সের (এমবিএ)  শিক্ষার্থী। অন্তর হাজং পারিবারের আর্থিক টানা পুরেনের মধ্যে থেকেও নিজের লেখাপড়া খরচ মেটান টিউশনি করে। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত তাদের সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও মায়ের ভাষার রক্ষায় ছুটে চলেছেন শতাধিক গ্রামে। টিউশনি আয় থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে সাম্প্রদায়িক ও মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য ছুটে চলেন এ প্রান্ত থেকে অপ্রান্তে। শুধু নেত্রকোণায় নয় শেরপুর ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকার হাজং সম্প্রদায়ের হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতি ও মায়ের ভাষা রক্ষায় কাজ করছেন তিনি।

শনিবার সকালে কলমাকান্দার সীমান্তের পাঁচগাও গ্রামের একটি বাড়িতে হাজং সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে আলোচনা সভা করেন অন্তর। এসময় তিনি হাজং সম্প্রদায় মানুষদের জীবন মান ও ভাষা রক্ষার কথা বলেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের ছেলে, মেয়ে ও গৃহিণী থেকে বিভিন্ন বয়সী ২৫ থেকে ৩০ জন বাড়ির উঠানে বসে হাজং ভাষা চর্চা করছেন। কখনো গল্পের ছলে, কখনো কেউ হাজং ভাষায় গীত করছেন, গান করছেন, কেউবা কবিতা পড়ছেন। বাকিরা শুনছেন। শেষে গীত, কবিতা, গান, গল্পে থাকা হাজং ভাষার শব্দগুলো নিয়ে চলছে আলোচনা।

অন্তর হাজং নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার রহিন্দ্র হাজংয়ের ছেলে।

জানা গেছে, নেত্রকোণার কলমাকান্দা সীমান্তবর্তী এলাকার সমতল ভূমিতে বসবাস আদিবাসী ও হাজং সম্প্রদায়ের মানুষের। এক সময় সীমান্তে তাদের একচ্ছত্র দাপটের সাথে বসবাস করেন। শুধু তাই নয় ঐতিহাসিক হাজং বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন ও টঙ্ক আন্দোলনের নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তারা। তবে বর্তমান সময়ে হাজং সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনমান অনেকটা পিছিয়ে আছে। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত প্রায় হাজংদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। বাংলাদেশের বাংলা ভাষার পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আছে অন্তত ৪০টি।

অন্তর হাজং বলেন, মায়ের মুখের ভাষাকেই ভুলতে বসেছেন। বিষয়টি প্রায় পাঁচ বছর আগে অন্তরকে ভাবায়। তাই নিজেদের ভাষা রক্ষার প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। প্রথমে দুর্গাপুরের বগাউড়া, গোপালপুর, ছনগড়া, আড়াপাড়া, বিজয়পুর, লক্ষ্মীপুর, ভবানীপুরসহ সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলোতে হাজং ভাষার চর্চা করানো শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, মায়ের মতোই মাতৃভাষাও যে শ্রদ্ধার, বুক দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করি। তারপরও ভাষা হারিয়ে যাওয়ার পথে। একটু সচেতন হলেই বা উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করলেই টিকে থাকবে।

অন্তর আরও বলেন, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। হাজং ভাষায় বলা শব্দগুলোকে সবার সঙ্গে পরিচিত করার মাধ্যমেই চলছে এই ভাষা চর্চা। আমি আমার সাধ্যমতো ভবিষ্যতেও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। গবেষণার মাধ্যমে বর্ণ তৈরি করে হাজং ভাষা রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ দাবিও করেন তিনি।