হঠাৎ করেই হত্যাকান্ড বাড়ছে উত্তরের জেলা পাবনায়। গত দেড় মাসে জেলাটিতে সাতটি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে গত পনের দিনেই ঘটেছে পাঁচটি হত্যাকান্ড।
হত্যাকান্ড ছাড়াও বেড়েছে ছিনতাই, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাটসহ নানা অপরাধ। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে জনমনে ভর করছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
৫ আগস্টের পর পুলিশ এখনও পুরোপুরি মাঠে সক্রিয় না হওয়ায় অপরাধ বাড়ছে বলে মত নাগরিক সমাজের।
গত ১৬ নভেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজের মৎস্য খামারে যাচ্ছিলেন পাবনা সদর উপজেলা মৎসজীবি দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জালাল উদ্দিন। পথিমধ্যে বেতেপাড়া মোড়ে পৌঁছালে হেমায়েতপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সদস্য মুন্তাজ আলী এবং তাদের লোকজন জালালকে কুপিয়ে হত্যা করে।
পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় কবরস্থানের কমিটি গঠন নিয়ে জালালের উপর ক্ষুব্ধ হয় মুন্তাজ ও তার লোকজন। সেই ক্ষোভের আগুনে প্রাণ দিতে হলো তাকে। হত্যাকান্ডের পর মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় ক্ষুব্ধ তারা। জড়িতদের ফাঁসির দাবি তাদের।
পরদিন ১৭ নভেম্বর রাতে পাবনা শহরে তুষার হোসেন নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সে ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর স্কুলছাত্র সিয়াম হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিল। তারপরদিন ঈশ্বরদীর রূপপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে ওয়ালিফ হোসেন মানিক নামের এক যুবলীগ কর্মীকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০২৩ সালের ১৭ জুন ছাত্রলীগ কর্মী তাফসির আহম্মেদ মনা হত্যা মামলার আসামী ছিলেন তিনি।
কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ায় আতংকে থাকতেন নিহত তুষারের মা তাসলিমা খাতুন। তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি একমাত্র ছেলেকে। হত্যার বদলে হত্যা আইন নয়, এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। জড়িতদের শাস্তি চান তারা।
শুধু জালাল, তুষার বা মানিক-ই নয়। গত দেড় মাসে পাবনা জেলায় মোট হত্যাকান্ড ঘটেছে সাতটি। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে দুটি আর নভেম্বর মাসের প্রথম পনেরদিনেই ঘটেছে ৫টি হত্যাকান্ড। এছাড়াও রয়েছে বেশকিছু অপমৃত্যু, ছিনতাই, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও সংঘর্ষের মতো নানা অপরাধমুলক ঘটনা। বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌড়াত্ম ও মাদক ব্যবসা। এসব ঘটনায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় সাধারণ মানুষ।
৫ আগস্টের পর পুলিশ প্রশাসন এখনও মাঠে পুরোপুরি সক্রিয় না থাকার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা এমনটাই মত নাগরিক সমাজের। আর পাবনা জেলায় মাসে ৫/৬টি হত্যাকান্ড স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের দাবি, আরো বেশি সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছে পুলিশ। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত দেড় মাসে পাবনায় সাতটি হত্যাকান্ডে মামলা হয়েছে সাতটি। এসব মামলায় আসামি ষাটজন, আর গ্রেফতার করা হয়েছে এগারোজনকে।
আরও পড়ুন: