রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

কুষ্টিয়া খাদ্য বিভাগের আজব চুক্তি: বন্ধ মিলের নামে চাল বরাদ্দ

কু‌ষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৩:৩৭

শেয়ার


কুষ্টিয়া খাদ্য বিভাগের আজব চুক্তি: বন্ধ মিলের নামে চাল বরাদ্দ
বন্ধ মিলের নামে চাল বরাদ্দ। ছবি: বাংলা এডিশন

অস্তিত্ব নেই এমন কয়েকটি চালকলের সাথে চুক্তি করেছে কর্তৃপক্ষ। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন বন্ধ অস্তিত্বহীন মিলের তথ্য গোপন করে মিল মালিকদের নামে চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কুষ্টিয়ার মিরপুর ও দৌলতপুরসহ কয়েকটি উপজেলায় অস্তিত্বহীন ও‌ লোকসানের‌ বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলের নামে দেওয়া হয়েছে বরাদ্দ। আবার বরাদ্দের বিষয়ে জানে না অনেক মিল মা‌লিক। সাধারণ মিল মালিকদের অভিযোগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা যোগসাজসে দিনের পর দিন চলছে এই অনিয়ম।

জেলা খাদ্য অ‌ফিস সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম হচ্ছে লাইসেন্স থাকা সাপেক্ষে চালকল সচল এবং চাল সরবারহ করার সক্ষমতা আছে তাদেরকেই দেয়া হয় চালের বরাদ্দ। প্রতিবছর একটি বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সেইসব চালকলের তালিকা তৈরী করা হয়। বরাদ্দ পাওয়ার পর চালকল মালিকরা খাদ্য অফিসের সাথে চুক্তি করে চাল সরবারহ করে থাকে। চলতি আমন মৌসুমে কুষ্টিয়ায় ৪৭ টাকা কেজি দরে ১৯ হাজার মেট্রিকটন চাল ক্রয় করবে খাদ্য বিভাগ। ২০২৫সালের ২৮ ফেব্রুয়া‌রি পর্যন্ত চলবে সংগ্রহ কার্যক্রম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লোকসানে বোঝা মাথায় নিয়ে প্রায় ৫ বছর আগে বন্ধ হয়েছে গেছে জেলার মিরপুর উপজেলার নিমতলা এলাকার শেখ রাইচ মিল। মিলের স্থাপনা ভেঙ্গে সেখানে এখন চলছে চাষাবাদের প্রস্তুতি। সেই মিলের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ মে.টন চাল। আবার একই এলাকার বাসনা রাইচ মিল বিক্রি হয়ে গেছে চার বছর আগে। এই মিলের নামেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাড়ে ১২ মে.টন চাল।

একই অবস্থা মিরপুরের বিআর রাইচ মিলের। মালিক বজলুর রহমান জানান, নবায়ন না করায় বাতিল হয়ে গেছে তার মিলের লাইসেন্স। কিন্তু তার মিলের নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২ মে.টন চাল। অথচ এসব বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই জানেন না দা‌বি তার।

বন্ধ ‌শেখ রাইচ মিলের মা‌লিক মমিনুর রহমান বলেন, আমাদের মিলটা হাস্কিং মিল। এটা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২০ সাল পর্যন্ত মিলটি চালু থাকলেও এরপর থেকে মিলটি বন্ধ আছে। মিলের জন্মলগ্ন থেকে দুইবার আমরা সরকারের কাছে চাল দিতে পেরেছি। বাদবাকি সময় যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দল সিন্ডিকেট চালায়। আমাদের লাইসেন্স আমরা চোখেও দেখি না। এখনো একই অবস্থা। আমাদের সই স্বাক্ষরও লাগে না।  ওরাই সই করে, ওরাই বরাদ্দ নেয়।

বাসনা রাইচ মিলের বর্তমান মা‌লিক রাশেদুজ্জামান বলেন, মিলটি চালাতে লোকসানের পড়তে হচ্ছে। তাই আমরা মিলটি বন্ধ করে দেই। আর ফুডের লাইসেন্সের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বা কোন কাগজ হাতে পাইনি। মিল‌টির আগের মা‌লিক আমিনুল ইসলাম জানান, মিল‌টি চালু থাকা অবস্থায় ২০ বছর আগে তিনি ২০ লাখ টাকা সিসি লোন উঠান। সেই লোন পরিশোধ করতে না পারায় সুদের টাকা অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে তিনি ২ বছর আগে এই মিল বিক্রি করে দেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন মিল মা‌লিক বলেন, শুধু শেখ, বাসনা বা বিআর রাইচ মিলই নয়। মিরপুর এবং দৌলতপুর উপজেলায় চাল ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া চালকলের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অস্তিত্বহীন অথবা বন্ধ। তা‌রা অভিযোগ করে বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা যোগসাজসে দিনের পর দিন চলছে এই অনিয়ম। সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদের সাহস করে না। তবে এর প্রতিকার চেয়েছেন তারা।

তবে এমন অ‌নিয়মের সত্যতা স্বীকার করে কু‌ষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, মিরপুরের বে‌শিরভাগ চালকলের অ‌স্তিত্ব নেই। দৌলতপুরেও একই অবস্থা। রাজনৈতিক কারণে আমরা কিছু বলতে পা‌রি না।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মিরপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা জিন্নাত জাহান বলেন, তিনজনের একটা কমিটি করে তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছিলাম। এরকম হওয়ার কোন সুযোগ নাই। কারণ আমি মিলারদের বলেছি আমার ইন্সপেক্টর যদি কোন মিলের তথ্য গোপন করে তাহলে আপনারা জেলা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত জানান, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কু‌ষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, সংগ্রহ মৌসুমের শুরুতে আমাদের একটা সার্ভে হয়। এই মৌসুমে যে মিলটা ভালো আছে পরের মৌসুমে সেই মিলটা ভালো নাও থাকতে পারে। কেউ বিক্রিও করে দিতে পারে। সেসব মিলের অস্তিত্ব আছে বা চালু আছে আমরা সেই মিলগুলোকে সার্ভেতে রেখেছি। নোটিশ বোর্ডে এবং মিটিং তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা আছে সুনিদিষ্টভাবে যদি কোন মিল সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে তবে, সাথে সাথে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং বরাদ্দ বাতিল করা হবে। আপনি যে মিলগুলোর বিষয়ে বললেন সেইগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

banner close
banner close