
পটুয়াখালীর দশমিনায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি, ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অবৈধ বাঁধা জাল দিয়ে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে।
ইলিশ প্রজননের জন্য ২২ দিন মা ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার থাকার পরেও বর্তমানে নদ-নদীতে ‘চাপিলা’ হিসেবে পরিচিত ইলিশের পোনায় সয়লাব হয়ে গেছে। প্রতিবছরই বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেনু ও ইলিশের পোনা শিকার করার জন্য নিষিদ্ধ বাঁধা জাল ব্যবহার করে একটি অসাধু চক্র।
এবারও তেঁতুলিয়া ও বুড়ো গৌরাঙ্গ নদীতে অবৈধ বাঁধা জাল পেতে মাছ শিকারের মহোৎসবে মেতেছে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। এসব জাল দিয়ে শুধু মাছ শিকারই নয়, ধ্বংস করা হচ্ছে সকল প্রজাতির মাছের পোনা। ফলে এসব নদীতে মাছ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক জেলে তেঁতুলিয়া ও বুড়া গৌরাঙ্গ নদীর বাঁশবাড়িয়া, ডনডনিয়া, কেদির হাট, গোয়ালখালী, আউলিয়াপুর, পাতার চর, চরগুনির মত বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন এসব নিষিদ্ধ বাঁধা জাল পেতে মাছ শিকার করছে কিছু ও সাধু ব্যবসায়ী ও জেলেরা। ওই জাল একাধিক জায়গায় কয়েক মিটার দৈর্ঘ্যের একেকটি জাল জোয়ারের সময় পানির গভীরে আড়াআড়িভাবে পাতা হয়। ভাটার সময় পানি নেমে গেল জালে আটকা পড়ে ছোট বড় মাছের পাশাপাশি অসংখ্য মাছের রেনু পোনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌ-পুলিশ ফাঁড়িকে ম্যানেজ করে যে যার মত ক্ষমতার অপব্যবহার করে নদিতে নির্বিঘ্নে বাঁধা জাল দিয়ে মাছ শিকার করাচ্ছেন। অবিলম্বে ওই জালের ব্যবহার বন্ধ করার দাবী জানান স্থানীয় জেলেরা।
এসব অবৈধ পথ বেছে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজালা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুয়েল শিকদার ও রণগোপালদী ইউনিয়নের কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ৯নং ইউপি সদস্যে মোঃ মোশারফ ফকিরের বিরুদ্ধে।
রণগোপালদি ইউনিয়নের নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক জেলে বাংলা এডিশনকে বলেন, আমরা নদীতে ঠিকমতো জাল ফেলতে পারিনা বাঁধা জালের কারনে। জোয়ার ভাটায় আমাদের জাল ওই অবৈধ বাঁধা জালের উপর উঠে ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমাদের ইউপি সদস্যের দাপটে এবং তার ছত্রছায়ায় তিনটি অবৈধ বাঁধা জাল ফেলে রাখে। আমরা নিরুপায় এ বিষয়ে ইউপি সদস্যকে বললে তিনি হুমকি ধামকি দেন। কয়েকদিন আগে নদীতে অবৈধ জাল অপসারনে নৌ-পুলিশ অভিযান চালালে আমাদের ইউপি সদস্য তাদের সহযোগিতা না করে উল্টো তাদের তাড়াতে হুকুম দেয়। তাই অবিলম্বে এসব জালের বিরুদ্ধে অভিযান না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে আমরা নদীতে কোন মাছ পাবো বলে মনে করি না।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের গোলখালী নদী তীরবর্তী এলাকার নাম প্রকাশ করা শর্তে এক জেরে জানান, মৎস্যজীবী দলের সভাপতি ইব্রাহিম প্রতিবছরই অবৈধ বাধা জাল দিয়ে এই নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির রেনু পোনা শিকারের মহোৎসব মেতেছে। আমরা ভাই কিছু বলতে পারতেছি না। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি নদীতে সঠিকভাবে অভিযান চালিয়ে সব জাল অপসারণ করা হোক।
ইব্রাহিম বিষয়টি শিকার করে বলেন, কি আর বলবো ভাই, আমি দলকে ভালোবেসে রাজনীতি করি। বাঁধা জালতো আছে আমার সেটা তো আর মিথ্যা বলার কিছু নেই, কিন্তু আমি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নদীতে বাঁধা জল পাতিনা। আমি আরো দশ বছর আগ থেকে বাঁধা দিয়ে মাছ ধরে আসছি। এবার পেরাই রাজনৈতিক চাপে জাল পাতাই বাদ দিয়ে দেব। আমাদের এখানে চারটি জাল আছে। এটা অস্বীকার করার কিছুই নেই। কিন্তু টোটাল উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অনেক মানুষের বাঁধা জল বেয়ে থাকে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোশারফ ফকির বলেন, আমি কোন রাজনীতি করি না, আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই। আমি নদীতে অবৈধ জালের কোন কারবার করিনা।
তুয়েল শিকদার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি আগে বাঁধা জাল বাইতাম কিন্তু এ বছর আমার জাল আমি বিক্রি কইরা ফালাইছি। আমি এমনে তেই আছি এবার দৌড়ের উপরে জাল বামু আবার কেমনে।
উপজেলা সামুদ্রিক মৎস্যকর্তা মোঃ নাজমুল হাসান তোর মুঠোফোনে ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
দশমিনা নৌফারির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মামুন বাংলা এডিশনকে জানান, আমরা মৎস্য ও নৌ-পুলিশ মিলে যৌথ অভিযান পরিচালনা করি এ ধরনের কোন তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর আমাদের ম্যানেজ করে নদীতে জল পাতা এটা অসম্ভব।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম বাংলা এডিশনকে জানান, আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করি আমরা মৎস্য অধিদপ্তর যারা কাজ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি আপনার উপজেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার একজন অফিসার শহীদ হয়েছে। দশমিনা নেদিতে অবৈধ বাঁধা জালের বিষয়টা আমিও শুনেছি আপনাদের ওখানে আমরা খুব শীঘ্রই অভিযান গুলো পরিচালনা করব। একটু অপেক্ষা করুন।
আরও পড়ুন: