
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলায় ২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টিতে প্রধান শিক্ষক নেই এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের ১৭টি পদ শূন্য। ফলে ক্লাস পরিচালনায় চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষকরা অতিরিক্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন, যা ক্লাস পরিচালনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানান অভিভাবকরা।
প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ রয়েছে সেগুলো হলো- শ্যামপুর, পশ্চিম বড়চর, নিশাপট, মড়রা, পশ্চিম নোয়াপাড়া, পুটিয়া, কেশবপুর, অলিপুর, নূরপুর, শেরপুর শুকুর আলী, বিশাউড়া এবং লাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর বিদ্যালয়ের দায়িত্ব বর্তমানে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হামিদা আক্তার চৌধুরী পালন করছেন। তবে এই পরিস্থিতি তার জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামিদা আক্তার চৌধুরী একাই দফতরের কাজ এবং ক্লাস পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ছয় মাস আগে প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণ করেছেন। নতুন নিয়োগ না হওয়ায় বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও দাফতরিক কাজের পাশাপাশি ক্লাস পরিচালনার দায়িত্বও বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের ওপর পড়েছে। এখানে ছয়টি শ্রেণির জন্য মাত্র দুইজন শিক্ষক রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের প্রশাসনিক কাজ, উপজেলা শিক্ষা অফিসে যাওয়া, এবং বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে জানান শিক্ষিকা হামিদা আক্তার চৌধুরী।
উপজেলার অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইশরাত জাহান বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে পদটি শূন্য রয়েছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন আফরোজা সুলতানা, যার ওপর প্রশাসনিক এবং পাঠদান সংক্রান্ত অতিরিক্ত কাজের চাপ রয়েছে। একটি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ক্লাস পরিচালনায় অসুবিধা হচ্ছে। শিক্ষকদের সীমিত সংখ্যায় সব শ্রেণির দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনিক কাজে সহায়তার জন্য কোনো অফিস সহায়ক নেই, যা বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নেই, রেললাইনের পাশে অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সবসময় নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকেন।
নিশাপট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুজ্জামান ২০২২ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার পরে থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, যা বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে অসুবিধা তৈরি করছে। শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আজম এক বছর আগে অন্যত্র সরকারি চাকরি গ্রহণ করেছেন। নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদী শূন্যতা রয়েছে।
অবসর, বদলি, মৃত্যু এবং জাতীয়করণের পরেও নিয়োগ না দেয়ার কারণে প্রধান শিক্ষকের থাকা শূন্য পদে দাফতরিক কাজ এবং শিক্ষা কার্যক্রম সমন্বয় করা সহকারী শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিভাবকরা জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা তাদের সামগ্রিক শিক্ষার মান কমিয়ে দিচ্ছে। নিয়মিত ক্লাস পরিচালিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে এবং তাদের শিক্ষাগত অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তারা প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ দ্রুত পূরণের দাবি জানিয়েছেন।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজমত আলী জানান, শিক্ষকরা একই সঙ্গে ক্লাস পরিচালনা এবং দাফতরিক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের জন্য চরম চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সরাসরি সরকারের অধীন। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে শূন্য পদের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সহকারী শিক্ষক সংকট দূর করার জন্যও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: