রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৭ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

পাথর হরিলুট বন্ধে নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ: ধারাবাহিক প্রতিবেদনে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে বাংলা এডিশন

মোঃ মাহবুব আলম চৌধুরী জীবন, সিলেট

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০৯

আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৬:১১

শেয়ার

পাথর হরিলুট বন্ধে নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ: ধারাবাহিক প্রতিবেদনে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে বাংলা এডিশন
৫ আগস্টের আগের ছবি বামে,৫ আগস্টের পরের ছবি ডানে। কোলাজ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তে ধলাই নদী রয়েছে বাংলাদেশের প্রধান পাথর কোয়ারি। ধলাই নদীতে পাথরের বিশাল মজুদের কথা চিন্তা করে ১৯৬৪-৬৯ সালে এই কোয়ারির কাছে রেলওয়ের জমিতে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ-ছাতক রোপওয়ে প্রকল্প। বসানো হয় স্বয়ংক্রিয় পাথর প্লান্ট। সেখানে পাথর ভেঙে তা রোপওয়ে বা কেবল লাইনের মাধ্যমে পাঠানো হতো ১৯ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকে। তবে প্রায় ৯ বছর আগে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর এ প্রকল্প এলাকার সম্পদ সর্বশেষ পাহারায় ছিল রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী-আরএনবি। 

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ভোলাগঞ্জজুড়ে শুরু হয় পাথর লুটপাটের মহোৎসব। ভোলাগঞ্জ প্রধান কোয়ারি, সাদা পাথর পর্যটন এলাকা ও আলোচিত শাহ আরেফিন টিলা এবং রেলওেয়ে বাঙ্কার এলাকায় চোখ পড়েছে দুর্বৃত্তদের। ধারাবাহিক পর্বের আলোকে শাহ আরেফিন টিলা ও সাদা পাথর লুটপাট পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো দিন/রাতে রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকা থেকে লুট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার পাথর। দিন-দুপুরে কয়েকশ নৌকায় পালাক্রমে এখান থেকে সরানো হচ্ছে পাথর। তেমনি ভাবে রাতেরবেলাও সরিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী ৫ আগস্ট চলে যাওয়ার পর বাঙ্কারের নিরাপত্তার দায়িত্ব পান স্থানীয় বিজিবি। অথচ রোপওয়ে বাঙ্কারের কাছে একটি ক্যাম্প ও দুটি পোস্ট থাকার পরও বিজিবি আছে দর্শকের ভূমিকায়।

বিষয়টি নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনাও হয়। সেখানে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিজিবিকে ১০ দিনের সময় দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সদ্য ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় উন্মুক্ত আলোচনা করতে আসেন এবং সে উন্মুক্ত  আলোচনায়ও পাথর লুটপাট চাঁদাবাজি হচ্ছে মর্মে উপস্থিত অনেকে অভিযোগ তুলেন উপজেলা প্রশাসনের উপর।  

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরাই নৌকাপ্রতি ৫০০ টাকা করে নিয়ে পাথর লুটের সুযোগ করে দিচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামীলীগের পতনের পর পাথর লুটের নতুন সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে। এরা ভোলাগঞ্জ কোয়ারি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের বিশাল এলাকা পাথর ব্যবসার জন্য ভাড়া দিয়েছে। বাঙ্কার থেকে লুট করা পাথর সরাতে চাঁদাও আদায় করছে। ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর পাথর লুটকারীরা অনেকটা হামলে পড়ে পাথররাজ্য কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ কোয়ারি এলাকায়। শুধু সাদা পাথর পর্যটন এলাকা থেকেই এক-দেড় মাসেই লুট হয় কয়েক'শ কোটি টাকার পাথর। ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের পাশে পর্যটনকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে প্রায় দেড় কোটি টাকায় নির্মাণ করা দেয়ালও ওই সময় ভেঙে ফেলা হয়। সেখানকার ইট লুটের পাশাপাশি বসানো হয় একাধিক মিনি স্টোন ক্রাশার মেশিন। হামলা হয় বাঙ্কার এলাকায়ও। খুলে নেয়া হয় লোহা, তামা ও টিন। ভাঙচুর করা হয় স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প ও পোস্ট।

অদ্য ৮ ডিসেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, রেলওয়ে বাঙ্কার এলাকার পাশাপাশি নদী থেকে এখনো বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে বালু ও চিপ পাথর উত্তোলন করছে। সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে মিলেমিশে লুটপাট করা হয়েছে। এখন নতুন সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে লুটপাট ও চাঁদাবাজি করছে। প্রশাসন জেনেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকাটি যেন নদীর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।

 পর্যটন ঘাটসহ একাধিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিদিন শত শত নৌকা দিন-রাত পাথর লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর এটি অনেক বেড়েছে।
সিন্ডিকেটমুক্ত হচ্ছে না ভোলাগঞ্জ। ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিকে কেন্দ্র করে সব সময় সক্রিয় থাকে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। আওয়ামীলীগের পতনের কয়েক দিনের মধ্যেই তৈরি হয়েছে নতুন সিন্ডিকেট।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, ভোলাগঞ্জ এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন উপজেলা বিএনপি যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদুর রহমান দুদুসহ দুইটি সিন্ডিকেট। দুদুর দলে রয়েছেন সাজ্জাদের ভাই আনোয়ার ও বোরহান, সহযোগী জাহাঙ্গীর মিয়া, জাকির হোসেন, সাজন আহমদ, মজফরসহ কয়েকজন। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির নেতা ও পাথর শ্রমিক বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল হোসেন, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মাহফুজ মিয়া ও কবির আহমদ, জেলা যুবদল যুগ্ম সম্পাদক বাহার আহমদ রুহেল ও উপজেলা যুবদলের নেতা রজন মিয়াসহ আরেকটি বলয়ও সক্রিয়। ৫ আগস্টের পর ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের পাশে ট্যুরিজম বোর্ডের অধিগ্রহণ করা জমির দেয়াল ভেঙে দখলে নেয় এসব সিন্ডিকেট।
সরেজমিন দেখা যায়, ওই স্থানে ২৫-২৬টি মিনি ক্রাশার মেশিন বসিয়ে পাথর ভাঙা হচ্ছে। শ্রমিকরা জানান, শতক হিসেবে ওই জায়গা কারো কাছে এক বছর বা মাসের হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাঙ্কার এলাকা থেকে লুট করা পাথর আনলোড করতেও টাকা তুলছে সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, দেশের একমাত্র রোপওয়েটি অবস্থিত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ। ১৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রোপওয়ে বন্ধ রয়েছে প্রায় ৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে। অবৈধ পাথরখেকোদের দৌরাত্ম্যে বর্তমানে অস্তিত্বই হারাতে বসেছে রোপওয়েটি। এর জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৩৫৯ একর জমি দখল করে সেখান থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে ঝুঁকিতে পড়ে গেছে রোপওয়েটির বাঙ্কার। হেলে পড়েছে রোপওয়েটির খুঁটি, ঝুলে রয়েছে রোপওয়েটির আবাসনের বিল্ডিং গুলো। চুরি হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রপাতিও। ৫আগস্ট থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র ও ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাঙ্কার থেকে পাথর ও মালামাল লুটপাট। যেখানে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে লুটপাট বন্ধ করার কথা ছিল। প্রশাসন রয়েছে চুপচাপ। লুটপাট বন্ধে নেই দৃশ্যমান কোনো অভিযান। লুটপাটের কথা প্রশাসন কিছু জানে না তা কিন্তু নয়, সবকিছু জেনেও তারা চুপচাপ! কিন্তু কেনো? অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই চালানো হচ্ছে এ লুটপাট। রহস্যজনকভাবে লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট ও টাস্কফোর্সের অভিযান না থাকার কারণে পাথরখেকো ও দুর্বৃত্তরা পাথর এবং রোপওয়ের মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
সিলেটের ভোলাগঞ্জে বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র রোপওয়ের (রজ্জুপথ) সংরক্ষিত এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। পাঁচ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) সরিয়ে নেয়ার পর সেখানে দফায় দফায় লুটপাট হয়। বোল্ডার পাথর থেকে শুরু করে রেলওয়ের যন্ত্রাংশ, লুটের তালিকা থেকে বাদ যায়নি কিছুই।

উল্টো সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকার ৩৫৯ একর জায়গার মধ্যে চার শতাধিক স্থান খুঁড়ে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে রেলওয়ে উপদেষ্টার দপ্তরের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের দেয়া তথ্যে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার এই রোপওয়ে এলাকায় লুটপাটের কারণে সরকারের অন্তত ২ থেকে আড়াই'শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা অপূরণীয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র রোপওয়ে (রজ্জুপথ)। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশে পড়েছে রোপওয়ের লোডিং স্টেশনের বাঙ্কার এলাকায় পাথর পরিবহনে স্থল কিংবা জলযানের বিকল্প হিসেবে ১৯৬৪ সালে ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতকে রজ্জুপথ স্থাপন করা হয়। ১১৯টি খুঁটির মাধ্যমে তৈরি হয় রোপওয়ের লাইন। এর মধ্যে আছে ভোলাগঞ্জ লোডিং স্টেশন (বাঙ্কার) ও ছাতক খালাস স্টেশন। বাঙ্কারের ৩৫৯ একর জমি, অবকাঠামোসহ রেলওেয়ের স্থাপনা, যন্ত্রপাতি দেখভাল করতে ২০০০ সাল থেকে আনসার বাহিনী দায়িত্বে ছিল। পরে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগ উঠলে ২০১২ সালে রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবিকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট পর সংরক্ষিত ওই এলাকা থেকে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) সরিয়ে নেয়া হয়। এ সুযোগে শুরু হয় পাথর লুট। দিনে ও রাতে বিরামহীন বাঙ্কারে গর্ত বানিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করে পাথর তোলা হচ্ছে। এতে ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতেও বদলাচ্ছে না দৃশ্যপট। বাঙ্কার খুঁড়ে পাথর তোলা চলছেই।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে ধারাবাহিক পর্বে অনুসন্ধানী প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াছ হোসাইন সম্পাদিত জনপ্রিয় শীর্ষে (বাংলা এডিশন) সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে সিলেটের প্রশাসন। সংবাদ প্রকাশের পর রেলওয়ে কর্তৃক সরেজমিনে ভয়াবহ লুটপাট, অবৈধ দখলবাজদের তালিকা প্রস্তুত করতে মাঠে নামে। সংশ্লিষ্ট সেক্টরের প্রশাসনিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে নেওয়ায় টনক নড়ে সিলেটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

লুটপাটের চিত্র দেখতে গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সরেজমিনে এসে পরিদর্শন করে রেলওয়ের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল। পরিদর্শক দল জানায়, ছয় আগস্ট রাত ৯টায় একদল দূর্বৃত্ত রোপওয়ে নিরাপত্তায় থাকা আরএনবি সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। দায়িত্বে থাকা আরএনবি সদস্যদের মারধর করে তাদের মোবাইল টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। তারপর থেকে আরএনবি সদস্যরা আর দায়িত্বে নেই।

ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকার ৩৫৯ একর জায়গার মধ্যে চার শতাধিক গর্ত খোঁড়াখুঁড়ি অবস্থায় পেয়েছে পরিদর্শক দল। সেখান থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। উত্তোলিত বা আমদানি করা পাথরের চেয়ে বোল্ডার পাথরের দাম বেশি হওয়ায় দফায় দফায় সেগুলো লুটপাট হয়। বাঙ্কারের সমতল অংশ যত্রতত্র গর্ত বানিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করায় সেখানকার বালু ও পাথর কোয়ারির ধলাই নদ অববাহিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। রোপওয়ে বাঙ্কারে বোল্ডার পাথর ছাড়াও রেলওয়ের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঙ্কারে যেসব আবাসিক স্থাপনা ছিল, সেখানকার দরজা, জানালা, আসবাবপত্র এমনকি ঘরের টিন পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়েছে। রোপওয়ের ১৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার ও টাওয়ার এক্সকাভেশন প্লান্টের সংখ্যা ছিল ১২০, কিন্তু ৩৫০ একর জায়গা যত্রতত্র গর্ত বানিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করা। এতে করে পুরো জায়গা পাশ দিয়ে প্রবাহমান ধলাই নদে মিশে যাওয়ার মতো অসমতলে রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিনিধিদলের পরিদর্শনের সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্র প্রতিনিধিরাও। পরিদর্শন করা প্রতিনিধি দলের পক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মো. আজমাইন মাহতাব বলেন, ৫ আগস্টের পর বিরামহীন লুটপাট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, লোহাজাতীয় মালামাল বেশি লুট হয়েছে। এতে করে রোপওয়ের যন্ত্রাংশ বাবদ ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী লুটপাটের পর দ্বিতীয় দফায় বিচ্ছিন্নভাবে আরও প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। সব মিলিয়ে রেলসম্পদ ও পাথর লুট হয়েছে ১৫০ কোটি টাকার।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে (বাঙ্কার) এর নিরাপত্তায় আবারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)কে। গত বুধবার তাদেরকে পুনরায় বাঙ্কারের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে ৫ আগষ্টের পর সেখানে আরএনবি সদস্যদের উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তখন বাঙ্কার থেকে প্রত্যাহার করা হয় আরএনবি সদস্যদের।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভোলাগঞ্জে পাহাড়ের ঢালে রেলওয়ের বাঙ্কারটি অবস্থিত। চারদিকে নদীর মধ্যখানে বাঙ্কারটির অবস্থান। এখানে রেলের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রাখা হয়। গত ১৯ আগস্ট শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ২০/২৫ জনের ডাকাত দল লুটপাট চালাতে হামলা করে। ওই সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন মাত্র দুজন সদস্য। দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতদলের সদস্যরা মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় নাজমুল হাসানকে কুপিয়ে জখম করে। সারা রাত তিনি খোলা জায়গায় ছটফট করে রাত কাটিয়েছিলেন।

আরএনবি সদস্যদের প্রত্যাহার করার পর লুটপাট শুরু হয় বাঙ্কারে। সেখান থেকে প্রথমে রোপওয়ের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লোট করা হয়। ধীরে ধীরে শুরু হয় রেলওয়ের জমি খোঁড়ে পাথর লুটপাট। কিছুদিনের ভিতর পাল্টে যায় সেখানের চিত্র। শুরু হয় সবকিছু হরিলুট। ধ্বংস হতে থাকে সরকারি স্থাপনা ও জমি। কেটে নেয়া হয় শতশত গাছ।
এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে (বাঙ্কার)-এ যান বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্হাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ, আরএনবি চট্টগ্রাম চীফ কমান্ড্যান্ট মোঃ আসাবুল ইসলাম, চিফ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা, কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উজায়ের আল মাহমুদ আদনানসহ প্রমুখ। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে (বাঙ্কার) নিয়ে বলেন,  বাংলা এডিশনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে বিষয়টি নজরে আসে। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহুল ফলোআপ নিউজ করাতে অল্প হলেও অন্তত রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা হয়েছে। তিনি আরও  বলেন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে যা অপূরণীয়! তবে এতো ক্ষতি হতো না যদি স্থানীয় প্রশাসনের সুবিধা ভোগ করতে নিস্ক্রিয় ভূমিকা না থাকতো, তিনি বলেন উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ এবং সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় সেনাবাহিনী দ্বারা চালিত ওখানকার বিজিবিও দূর্বৃত্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লুটেপুটে খেয়েছে

banner close
banner close