রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৭ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

সিরাজগঞ্জে ১২০ কোটির প্রকল্পে ৪২ কোটির অনিয়ম

প্রতিনিধি,সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৩:৩২

শেয়ার

সিরাজগঞ্জে ১২০ কোটির প্রকল্পে ৪২ কোটির অনিয়ম
ছবি: বাংলা এডিশন

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে যমুনা বেষ্টিত সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে স্থাপন করা হয় বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট। ২০১৬ সালে পাঁচ একর জমির ওপর বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন।

এ সময়ের মধ্যে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, অধ্যক্ষের বাসভবনসহ আরও বেশ কিছু ভবন নির্মাণ করা হয়। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিরীক্ষা অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে এই প্রকল্পে ৪২ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬০ টাকা অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।'

২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদফতরের নিরীক্ষা ও হিসাব কর্মকর্তা বিমল কৃষ্ণ মৃধা এই বিস্তর অনিয়মের চিত্র তুলে এনে প্রতিবেদন দাখিল করেন। নিরীক্ষা অধিদফতর প্রকল্পটির ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের কাজের ওপর ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি নিরীক্ষা কাজ পরিচালনা করে। নিরীক্ষায় ৪২ কোটি ৫২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬০ টাকা অনিয়মের চিত্র ফুটে ওঠে।'

এর মধ্যে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৩ কোটি ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪০৭ টাকার নিম্নমানের আসবাবপত্র ফ্যানকন ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ, চুক্তিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে যন্ত্রপাতি স্থাপন ও সন্তোষজনকভাবে পরিচালনা ছাড়াই শতভাগ বিল পরিশোধ করায় ২৪ কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার টাকা, যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ১৪ কোটি ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ২৫০ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যয় করা হয়েছে।

এ ছাড়াও কম্পিউটার ক্রয় বাবদ ১৭ লাখ ৮ হাজার ৯৯৫ টাকা, বই সরবরাহ না করেই ২১ লাখ ১৮ হাজার ৭০৫ টাকা, সম্মানী বাবদ ১১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫০ টাকা, নকল ক্যাশ মেমো দেখিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় দেখিয়ে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬৫২ টাকা ও পরিশোধিত বিভিন্ন বিল হতে ভ্যাট কর্তন না করায় ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় করা আবশ্যক বলে সুপারিশ করেছেন তৎকালীন নিরীক্ষা ও হিসাব কর্মকর্তা বিমল কৃষ্ণ মৃধা।

এ বিষয়ে বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদফতরের তৎকালীন নিরীক্ষা ও হিসাব কর্মকর্তা বিমল কৃষ্ণ মৃধা বলেন, ‘আমি ওই প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। বিভিন্ন অনিয়ম সেখানে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর এই প্রতিষ্ঠানের আর কোনো নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি হয়নি। প্রতিবেদনে আমি জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছিলাম।’

বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন বস্ত্র অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) শাহাদাত হোসেন। তিনি বাংলা এডিশঙ্কে বলেন, ‘আমি বর্তমানে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্বে রয়েছি। ওই প্রকল্প ২০২১ সালের জুনেই শেষ হয়েছে। পরবর্তী বছর আমার বিরুদ্ধে বেশ কিছু নিরীক্ষা আপত্তি দেয়া হয়েছিল। যদিও এগুলো সব মিথ্যা। তবুও আমি সেগুলোর জবাব দিয়েছি। তাছাড়া নিরীক্ষা কর্মকর্তার কাজই তো নিরীক্ষা আপত্তি দেয়া। এটা সব সরকারি প্রতিষ্ঠানেই হয়।’

প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রকল্প থাকাকালীন সময়ে আমি ছিলাম না। গত বছরের জুলাই মাসে এখানে যোগদান করেছি। প্রকল্পের বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে পূর্ববর্তী যারা ছিলো তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।’

banner close
banner close