
বেধে সম্প্রদায়ের হাজেরা বসবাস করছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর সোলাখালী ব্রিজের নিচে। নদীটির পাড়ে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে ছনের তৈরি ঘরে তার ছোট্ট সংসার। পুরো সংসারজুড়ে কেবল দুঃখ আর দুঃখ। পরিবারের পাঁচ জন মিলে ঘুমান একটি মাত্র খাটে। স্বামী নূর হোসেনের সাথে আগে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিঙ্গা লাগানো, তাবিজ বিক্রিসহ বিভিন্ন কাজ করে অর্থ উপার্জন করলেও আধুনিকতার সময়ে এসে কমেছে সেসবের চাহিদা। এতে কমে গেছে তাদের আয়ের উৎস।
প্রায় ২০ বছর আগে যাযাবর হাজেরা ডাকাতিয়ার পাড়ে শুরু করেন বসবাস। ত্রিপাল, বাঁশের বেড়া ও দঁড়ি দিয়ে তৈরি ঘরে বসবাস করেছেন টানা ১৭ বছর। তিন বছর হলো স্বামীর দিনমজুরীর জমানো টাকায় ছনের ঘরটিতে হয়েছে ঠাঁই। গেলো আগষ্টের বন্যায় ঘরটি হয় ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা শেষে নিজের ঘরে ফিরে আসলেও দুঃখকে রেখে আসতে পারেনি আশ্রয়কেন্দ্রে। চিরকালের সঙ্গী হয়ে দুঃখটুকু আজও সঙ্গ দিচ্ছে হাজেরার সংসারে।
বর্ষার সময় টুপটুপ করে পানি পড়ে ঘরে। শীতের সময়টায়ও ঘরে থাকতে কষ্ট হয় তাদের। হাজেরার তেরো বছরের মেয়ে রীনার রয়েছে পুরোনো জোড়াতালি দেয়া একটি মাত্র শীতের জামা।
বছর পয়ত্রিশ বয়েসী হাজেরা মা হন ১৭ বছর বয়সে। জহিরুল তার প্রথম সন্তান। আঠারো বছর বয়েসী জহিরুল ও দুবছরের ছোটো জনিও সহ্য করছে শীত। তাদের সবার বসবাস ছনের তৈরি ছোট্ট ঘরটিতে।
আক্ষেপ করে হাজেরা বলেন, আঙ্গো শীত মানে না। আগে হেলিকপ্টারে করি কম্বল দিতো আইতো নেতারা। এবার কারো সহযোগিতা হাই নো। হোলা মাইয়ার হড়ালেয়া অয় না টিঁয়ার লাই। প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি বলেন, আমরা কী এই দেশের নাগরিক না?
নিজেদের পেশার তেমন কদর না থাকায় রিকশা চালিয়ে উপার্জিত টাকায় কোনোমতে সংসারের হাল ধরেছেন হাজেরার স্বামী নূর হোসেন। তবে টানাপোড়েনের সংসার চলে না তার একার রোজগারে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান খাঁন বলেন, হাজেরাদের কথা জানা ছিলো না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় বসবাসরত বেধে সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রতিবছর শীতবস্ত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়া হয়। এবারও সেটির ব্যত্যয় ঘটবে না।
আরও পড়ুন: