রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৭ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

আগামী সংসদ নির্বাচনে নতুন সীমানা নির্ধারণে আসন পুনঃবহাল চায় হরিরামপুর-শিবালয়বাসী

প্রতিনিধি,হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)

প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৪:২২

শেয়ার

আগামী সংসদ নির্বাচনে নতুন সীমানা নির্ধারণে আসন পুনঃবহাল চায় হরিরামপুর-শিবালয়বাসী
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই মানিকগঞ্জ-২ আসনের সীমানা পরিবর্তন করে নতুন সীমানা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে আসন পুনঃবহাল চায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার জনগণ।

জানা যায়, দেশের স্বাধীনতা উত্তরাত্তোর ১৯৭২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এ জেলায় ৪টি সংসদীয় আসনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০০৮ সালে সেনা শাসনামলে মঈন উদ্দীন-ফখরুদ্দিনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএনপির দূর্গ্যখ্যাত সারাদেশের আসনগুলোকে নতুন সীমানা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে আসন পুনঃবিন্যাস করেন তৎকালীন নির্বাচন কমিশন এটিএম শামসুল হুদা। এতে মানিকগঞ্জের চারটি আসনকে ভেঙে তিনটি আসনে রূপান্তরিত করা হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে মসনদে বসাতেই তৎকালীন মঈন উদ্দীন-ফকরুদ্দিন সরকারের নির্বাচন কমিশন বিএনপির ভোটের দূর্গ্যে ভাগ বসাতেই আসন সংখ্যা  কমিয়ে নতুন করে সীমামা নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে এ দুই উপজেলার তৃণমূল থেকে অভিযোগ উঠে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির ভোট ব্যাংক খ্যাত এ জেলার চারটি আসন ভেঙে তিনটি আসন করায় দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ জেলার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার জনগণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-৪ আসন ভেঙে রাজধানী ঢাকা নিকটবর্তী সিংগাইর উপজেলার সাথে হরিরামপুরকে যুক্ত করে মানিকগঞ্জ-২ আসন করা হয় । এই আসনটি আগে ছিল হরিরামপুর-শিবালয় দুটি উপজেলার সমন্বয়ে। ফলে পদ্মা-যমুনা অববাহিকায় অবস্থিত হরিরামপুর-শিবালয়ে উন্নয়নের দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন এ উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ জনগণ।

সরেজমিনে হরিরামপুর-শিবালয়ের বিভিন্ন এলাকায় গেলে সাধারণ জনগণ জানান, ‘আমাদের মানিকগঞ্জের আসন কমিয়ে আনার জন্যই এ জেলায় তুলনামূলক উন্নয়ন অনেকটাই কম হয়েছে। যদি চারটি আসন থাকতো তাহলে উন্নয়ন আরও বেশি হতো। কারণ জেলায় চারজন এমপি থাকলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বরাদ্দের পরিমাণও বেশি পাওয়া যেতো এবং উন্নয়নেও মানিকগঞ্জ জেলা অনেক এগিয়ে যেত।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২৪৫ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনে ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হরিরামপুর উপজেলা। প্রায় তিন লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর এ উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৬০৮। অপর দিকে ১৯৯ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনে ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় শিবালয় উপজেলা। প্রায় দুই লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর এ উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩১৯।

স্থানীয়রা দাবি করেন, পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মা ভাঙন কবলিত হয়ে পড়ে হরিরামপুর উপজেলার ৯ ইউনিয়ন। তারমধ্যে উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার নদী পথের ওপারে দুর্গম চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। এর ফলে দুর্গম চরাঞ্চল থেকে নদী পথ পাড়ি দিয়ে চরাঞ্চলের মানুষের সিংগাইর উপজেলায় যাতায়াত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। যার ফলে সিংগাইর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সাথে এ উপজেলার বাসিন্দাদের দূরত্বের সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হন এ উপজেলার সাধারণ জনগণ।

অপর দিকে শিবালয় উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নদী ভাঙনের কবলে পড়ে শতশত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এ উপজেলার সাধারণ জনগণও জনসেবা বঞ্চিত। তাই হরিরামপুর- শিবালয়ের শতভাগ উন্নয়নের জন্য আগামী নির্বাচনের আগেই এ জেলার পুনঃসীমানা নির্ধারণ করে জেলায় আসন সংখ্যা চারটি করে হরিরামপুর-শিবালয় নিয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসন গঠনের জোর দাবি জানান হরিরামপুর-শিবালয়ের জনগণ।

হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিকুজ্জামান শিপু জানান, ‘মঈন উদ্দীন-ফকরুদ্দীন শাসনামলে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে এবং বিএনপিকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতেই তৎকালিন নির্বাচন কমিশন সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপির আসনগুলোকে দ্বিখণ্ডিত করেছে। আর এই চক্রান্তমূলক সিদ্ধান্তের বলি আমরা হরিরামপুর-শিবালয়ের আপামর জনগণ। ফলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে পদ্মা-যমুনা অববাহিকায় অবস্থিত হরিরামপুর-শিবালয়ের জনগণ আশানুরূপ উন্নয়ন থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছি। তাই এখন আমাদের প্রাণের দাবি, আগামী নির্বাচনের আগেই আসন পুনঃবিন্যাস করে মানিকগঞ্জে চারটি আসনে রূপান্তরিতসহ হরিরামপুর-শিবালয়কে মানিকগঞ্জ-২ আসন হিসেবে পুনঃবহাল করা হোক।’

শিবালয় উপজেলা বিএনপির সভাপতি রহমত আলী লাভলু জানান, ‘পদ্মা-যমুনার তীরে অবস্থিত শিবালয় উপজেলা। এ উপজেলাটি ২০০৮ সালের আগে হরিরামপুরের সাথে যুক্ত হয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসন ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে আমাদের এই আসনটি থেকে সরিয়ে ঘিওর-দৌলতপুরের সাথে যুক্ত করে দেয়ার মধ্য দিয়ে এ জেলার একটি আসন কমিয়ে আনা হয়। এতে করে শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় মানিকগঞ্জ-১ আসন। এর ফলে গত পনের বছরে আমরা কিন্তু উন্নয়নের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ি। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া, এই মানিকগঞ্জে পুনরায় চারটি আসন করা হোক। এতে করে পদ্মা-যমুনা বিধৌত শিবালয়-হরিরামপুর আশানুরূপ উন্নয়নের মধ্য আবার প্রাণ ফিরে পাবে। আসন পুনঃনির্ধারণের জন্য আমরা বর্তমান নির্বাচন কমিশন বরাবর একটা আবেদনপত্রও জমা দিয়েছি।’

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা জানান, ‘২০০৮ সালের আগে সেনা সমর্থিত মঈন উদ্দীন-ফখরুদ্দিন সরকারের নির্বাচন কমিশন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিয়ে ক্ষমতায় বসাতেই বিএনপির ঘাঁটিখ্যাত মানিকগঞ্জকে চারটি আসন থেকে কমিয়ে তিনটি আসনে পরিণত করা হয়। যা আমাদের দলের পক্ষ থেকে বার বার প্রতিবাদ ও অভিযোগ করার পরেও তৎকালীন নির্বাচন কমিশন বিষয়টি কোনো আমলেই নেয়নি। এর ফলে মানিকগঞ্জ জেলার একটি আসন কমিয়ে আনায় ভৌগলিকভাবে মানিকগঞ্জবাসী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ মানিকগঞ্জের আগের সীমানা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশন বরাবর বেশ কয়েকটি আবেদন মানিকগঞ্জ থেকে আমরা পাঠিয়েছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন কমিশনের কাছে মানিকগঞ্জের আপমর জনগণের চাওয়া, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই আসন পুনঃবিন্যাসের মধ্য দিয়ে আবারো মানিকগঞ্জে সংসদীয় চারটি আসন ফিরিয়ে আনা হোক।’

banner close
banner close