রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৭ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

হোগলা পাতার ঘরে কষ্টের সংসার সুরমার

জিহাদ হোসেন রাহাত, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৮:১৪

আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৮:২২

শেয়ার

হোগলা পাতার ঘরে কষ্টের সংসার সুরমার
সুরমাদের সম্বল হোগলা পাতার সেই ঘর। ছবি: বাংলা এডিশন

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,

রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।

বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি,

একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি

জসীমউদ্দীনের সেই আসমানী কবিতার সাথে পুরোপুরি মিল রয়েছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বসবাস করা সুরমার। স্বামী, তিন সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৭ জনের এই পরিবারটির সবার বসবাস হোগলা পাতার তৈরি জীর্ণশীর্ণ একটি ঘরে।

ঘর তো নয় যেন পাখির বাসা সেটি। এক খাটে ঘুমান পাঁচজন। মাটিতে বিছানা পেতে বাকি দুজন কোনো রকমে কাটান রাত।

সুরমার বসতঘরটি রায়পুর উপজেলার চরাঞ্চলের জনপদ উত্তর চরবংশী ইউপির চরঘাঁসিয়া গ্রামের চান্দার খাল এলাকায়। খালের পশ্চিম পাড়ে হোগলা পাতার ঘরে সুরমা-কামালের ছোট্ট এই কষ্টের সংসার।

কামাল পেশায় একজন জেলে। তার উপার্জনে কোনোমতে টিকে আছে সংসারটি। স্বল্প আয়ের কামালের সংসারে পড়েছে মা হাজেরা বেগম ও বাবা মরণ আলীর ভরণপোষণের দায়িত্ব। বছর বাইশের সুরমার সংসারের সদস্যরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটালেও দেখার নেই কেউ। আওয়ামী সরকারের আমলে এক নেতাকে টাকা দিতে না পারায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরও জোটেনি তাদের কপালে।

দুই মেয়ে, এক ছেলে ও বাবা-মাকে নিয়ে কামাল-সুরমা যে কত কষ্টে দিনাতিপাত করছেন সেটি তাদের বসবাসের ঘরটি দেখলেই বোঝা যায়। টাকার অভাবে ছয় বছর বয়েসী কন্যা শিশু সুমির পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারছেন না তারা। তিন বছর বয়সী ছোট্ট শিশু সুমনের শরীরে নেই পরিধানযোগ্য একটি জামা-প্যান্ট। একই হাল তাদের চার বছরের মেয়ে সুরাইয়ার।

যে ঘরে ঘুমান সেটিকেই ব্যবহার করেন রান্নাঘর হিসেবে। পরিবারটির নেই স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। রোগ শোকে জর্জরিত হয়ে দিন কাটছে পরিবারের নব্বই বছর বয়সী বৃদ্ধ মরণ আলী ও সত্তর বছরের বৃদ্ধা হাজেরার।

মনের ভেতরকার কষ্ট উগড়ে দিয়ে কামাল বলেন, হোগলা পাতাডি নদীর থেকে জোগাড় কইরা আইন্না ঘরডা বানাইছি (হোগলা পাতাগুলো নদী থেকে এনে ঘরটা বানিয়েছি)। মাছ ধরনের কামে যাই (মাছ ধরার কাজে যাই)। দিনমজুরি কইরা কামাই কইরা আইন্না খাই (দিনমজুরি করে এনে খাই)। কারে কমু দুঃখের কতা (কাকে বলবো দুঃখের কথা)। কেওই ত দেহে না আমগরো (আমাদেরতো কেউ দেখে না)।

বার্ধক্যের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত কামালের মা হাজেরা বেগম বলেন, দ্যাশ স্বাধীনের সময় কচুও খাইছি (দেশ স্বাধীনের সময় কচু খাইছি)। অনও হোলাহাইন লই কষ্ট করি (এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে কষ্ট করি)। কোনো কূলের লাগু হাইতে আছি না (কোনো কূল পাচ্ছিনা)। অভাবই আমগো কাছে।

কান্না চাপা কন্ঠে সুরমা বলেন, বাইচ্চা কাইচ্চা লই খুব কষ্টে আছি (ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি)। সরকারের কাছে আবেদন আমগোরে যদি এট্টু কিছু সাহাইয্য করে (সরকারের কাছে আবেদন আমাদের যদি কিছু সাহায্য করে)। তয়লে আমরা কিছু পামু (তাহলে আমরা কিছু পাবো)।

জানা যায়, পরিবারটি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে হোগলা পাতার ঘরটিতে বসবাস করছে। তার আগে বসবাস করতো অন্যত্র। সেটিও ছিলো পাতার ঘর।

banner close
banner close