
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলনায় আবারও চালু হয়েছে র্যাফেল ড্র নামের উন্মুক্ত জুয়া। ‘দৈনিক সাদিকা র্যাফেল ড্র’র ব্যনারে চলছে এই জুয়ার আসর। নগরীর গিলাতলা বালুর মাঠে গত ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী মিনি বাণিজ্য ও আনন্দ মেলা। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) থেকে খুলনা মহানগরীতে প্রায় শতাধিক ইজিবাইকে করে এই লটারির টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনলে ১ম পুরষ্কার হিসেবে বিভিন্ন ব্রান্ড কোম্পানির মোটরসাইকেল দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। যা দেখে বেশি প্রলোভিত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সারাদিনের স্বল্প আয়ের পুরো টাকা দিয়ে কিনছেন লটারির টিকিট, রাত শেষে নিঃস্ব হয়ে ফিরছেন বাড়ি।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খানজাহান আলী থানা ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে র্যাফেল ড্র বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। শুরুর আগেই তৌহিদী জনতার ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। কিন্তু এতে বন্ধ তো হয়ই-নি, বেড়েছে আরও আয়োজকদের তৎপরতা।
স্থানীয়রা বলেন, সেলিম খান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি মেলা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেনের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
বিগত সরকারের আমলে দেখা যেতো, আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় খুলনার বিভিন্ন এলাকায় র্যাফেল ড্র চালু হতো। প্রতিবারই এর বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভের জেড়ে লটারি বন্ধ করে দিতো কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালে সর্বশেষ বটিয়াঘাটায় এমন লটারির আয়োজন হয়েছিল।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মেলার আকর্ষণ হিসেবে প্রতি রাতে র্যাফেল ড্রয়ের কথা প্রচার করা হলেও সেখানে সার্কাস ও বিনোদন জোন নামে পৃথক পৃথক ইভেন্ট চালু করা হয়েছে।
থানা জামায়াতের আমীর সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষদের টার্গেট করেই এ আয়োজন করা হয়েছে। এবং তারাও এই ফাঁদে ধরা দিয়ে হচ্ছেন নিঃস্ব। তাই আমরা এ আয়োজন বন্ধের দাবিতে মিছিল করেছি, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোন প্রতিকার এখনো পাইনি।
খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, রিকসা, ভ্যান চালক, কুলি-মজুর সারাদিন যা আয় করে, তা দিয়েই কিনছে লটারির টিকেট। একজন একটি মোটরসাইকেল পেলেও, হাজার হাজার জন হচ্ছে নিঃস্ব। তাছাড়া সার্কাস যাত্রাপালায় নষ্ট হচ্ছে যুবসমাজ। তাই আমরা এ র্যাফেল ড্র বন্ধের দাবি জানিয়েছি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এর সাথে জড়িত থাকায়, তা এখনও বন্ধ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে আয়োজক সেলিম খানকে না পেয়ে মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল ধরেননি।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, র্যাফেল ড্র ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেলিম খান নামে এক ব্যাক্তির পরিচালনায় চলছে। তবে শুরুর আগে আমি কিছুই জানিনি।
ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসনিম জাহান বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। উক্ত স্থানে এমন কিছু হয়ে থাকলে সেটা আমার অগচরেই হয়েছে।
আরও পড়ুন: