
মানিকগঞ্জের শিবালয়ের যমুনা নদীতে কাটার মেশিন বসিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় অবৈধভাবে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। একটি চক্র বেপরোয়াভাবে নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় প্রশাসনের চোঁখ ফাকি দিয়ে প্রকাশ্যে নদীর বিভিন্ন স্থানে ৮টি কাটার মেশিন দিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে বালু কেটে বিক্রি করছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদনও দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া গত দুইদিন আগে আরিচা ঘাটে বিক্ষোভও করেছে স্থানীয়রা। কিন্তু কোনো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এই অবৈধ বালু উত্তোলন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অবৈধ বালু উত্তোলনের ওই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মানিকগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার। এ এলাকায় সরকারিভাবে কোনো বালু মহাল ইজারা না দেয়া সত্ত্বেও মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রাত-দিন যমুনা নদী থেকে ১২ ইঞ্চি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে।
এতে আলোকদিয়া গ্রামের অসংখ্য বসতবাড়ি ও আবাদি জমি ভাঙনের মুখে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচারে যমুনা নদী থেকে একটি চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও থামছে না বালু উত্তোলন।
এতে উপজেলার চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন টাওয়ার, আলোকদিয়া চরের মুজিব কেল্লা, বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত ও অতিষ্ট হলেও মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আলোকদিয়া এলাকার যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবির) বিদ্যুতের টাউয়ারের পাশে আটটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে তা বাল্কহেডে করে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে ভাঙন দেখা দিলে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি। বর্তমানে ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, সাত কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে নির্মিত মুজিব কেল্লা।
ভাঙনের ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী ছলিম উদ্দিন জানান, ‘এখন শীতকাল হওয়ায় নদী ভাঙন কম। কিন্তু নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভাঙছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে এই ভাঙন তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। ফলে আমরা ভাঙন আতংকে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র সরে যাচ্ছি।’
ভুক্তভোগী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বিদ্যুতের পিলারের নিকট থেকে ৮টি ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এলাকার কেউ বাঁধা দিতে গেলে মারধরসহ বিভিন্ন মামলা হামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দেয়। এর ফলে ভয়ে এখন কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।’
আলোকদিয়া চরের বাসিন্দা জামাল হোসেন জানান, ‘অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা বিদ্যুতের পিলারের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করছে। বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা বালু উত্তোলন বন্ধ করছে না। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী প্রশাসন বরাবর একাধিক বার অভিযোগ করেছে। এতেও অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে এখনো প্রশাসন কেনো কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তা আমরা জানিনা।’
এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে তো অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরপর থেকে বন্ধ ছিল। কোনোভাবেই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। তবে আমরা অভিযানে যেতে যেতেই তারা খবর পেয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ে।”
অবৈধ এই বালু উত্তোলনের মূলহোতাদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান বেলাল হোসেন।
আরও পড়ুন: