
ছবি: বাংলা এডিশন
উখিয়ার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা পালংখালীর থাইংখালীতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে রমরমা টিকিট-বাণিজ্য চলছে। রোহিঙ্গাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে দর্শকদের থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা দর্শক এনে টিকিট বিক্রির নামে দৈনিক দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পকেটে ঢোকাচ্ছে আয়োজকরা। পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছে স্থানীয় সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরা।
মাঠের মূল ফটক থেকে ঢুকলে দিতে হয় জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ভেতরে ঢুকে চেয়ারে বসে খেলা দেখতে হলে গুনতে হয় বাড়তি ৫০/১০০ টাকা। হাজারখানেক চেয়ার ও স্কুলের বেঞ্চ বসিয়ে অতিরিক্ত চাঁদাবাজির অভিযোগ টুর্নামেন্ট কমিটির বিরুদ্ধে।
উখিয়ার সন্তান বয়সভিত্তিক ফুটবল দলের খেলোয়াড় সাহেদ ও নারী জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য রিফার নাম দিয়ে এই টুর্নামেন্টের নামকরণ করা হয়েছে। একপ্রকার তাদের নাম ভাঙিয়ে টুর্নামেন্টে চলছে টিকিট-বাণিজ্য।
কোনোরকম বৈধ অনুমতি ছাড়াই থাইংখালী উচ্চবিদ্যালয় খেলার মাঠে চলছে এই টুর্নামেন্ট।
স্থানীয়রা জানান, মোট ১৬টি টিমের মধ্যে ৬টি রোহিঙ্গাদের। পরে লোকসানের আশঙ্কায় টুর্নামেন্ট চলাকালেই একটি স্থানীয় টিম বাদ দিয়ে আরও একটি রোহিঙ্গা টিম যোগ করে কমিটি।
রোহিঙ্গা টিম ও বিশাল এই জনগোষ্ঠীর দর্শক ধরে রাখতে খেলার 'টায়' করা হয়েছে ইচ্ছেমতো। কোনো লটারি পদ্ধতিতে না গিয়ে রোহিঙ্গা টিমকে পরের রাউন্ডে তুলতে ম্যানুয়ালি 'প্রতিপক্ষ' নির্বাচন করে দেয় আয়োজক কমিটি। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত বিভিন্ন শরণার্থীশিবির থেকে এখানে টিম করেছে রোহিঙ্গারা। টুর্নামেন্টে রোহিঙ্গা টিম টিকিয়ে রেখে কীভাবে টিকিট-বাণিজ্য নিশ্চিত করা যায়, সেই সমস্ত বন্দোবস্ত করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান'র মতো এখানেও ম্যাচ পরিচালনাকারী থেকে শুরু করে ধারাভাষ্যকার, এমনকি মাঠের ধূলিকণা পর্যন্ত সকলেই কমিটির লোক।
অভিযোগ আছে, বেশ কয়েকটি ম্যাচে আয়োজক কমিটি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রেফারিরা পক্ষপাত করেছে; রোহিঙ্গা টিমগুলোর প্রতিপক্ষদের হয়রানি করা হয়েছে; খেলায় ওলটপালট সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে; এসব দেখে সাধারণ দর্শকরাও সমালোচনা করতে দেরি করেনি।
প্রথম রাউন্ডে কোর্টবাজার টিম ও টেকনাফের একটি টিম রেফারি ও কমিটির বিরুদ্ধে আঙুল তোলে। এ ছাড়া নকআউট পর্বের প্রথম রাউন্ডে কয়কটি রোহিঙ্গা টিম হেরে যাওয়ায় কমিটির সদস্যরা হতাশ হয়েছে বলে জানা যায়।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, টুর্নামেন্ট কমিটিতে ৯৮ জন সদস্য। এদের মধ্যে অধিকাংশই অপেশাদার, ক্রীড়াবিমুখ ও হাঙ্গামাপ্রিয় লোক; যারা লাভের আশায় ৩ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছে। লাভের আশায় সদস্য হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছে মাদক কারবারিও।
এদিকে, টুর্নামেন্ট চলাকালে গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রোহিঙ্গা টিমের তৃতীয় ম্যাচে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় থাইংখালী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের ৫ বছরের কন্যা নূরী আক্তার। রোহিঙ্গা দর্শক-বোঝাই একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (টমটম) ধাক্কা লেগে মাথায় ও শরীরে জখম হয় তার। অসহায় দিনমজুর নুর মোহাম্মদের কন্যাকে বাঁচাতে এখন লাখ লাখ টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। গুরুতর আহত শিশু নূরী বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির সভাপতি রশিদ আহমদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণসহ অধিকতর প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান এবং প্রতিবেদককে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে ফোন রেখে দেন।
খেলায় রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, 'বিষয়টি শুনেছি। এ নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় থেকে একবার যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমরা থানা-পুলিশকে অবহিত করেছি এবং এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
১৮ ডিসেম্বর বুধবার জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন হয়।
এদিকে সচেতন মহলের প্রশ্ন, কাঁটাতারের বাইরে এবং হাট-বাজারে রোহিঙ্গারা নিষিদ্ধ। তবে কাঁটাতার ডিঙিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা কীভাবে এখানে এসে খেলছে, দেখছে! স্থানীয়দের জন্য এটা হুমকিস্বরূপ মনে করছেন তারা।
সচেতন মহলের দাবি, রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে বিগত টুর্নামেন্টগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ এবারে প্রশাসন নিজেই পাহারা দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে টুর্নামেন্ট চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: