
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় প্রান্তিক কৃষকেরা লোকসানের শঙ্কা মাথায় নিয়েই চলতি রবি মৌসুমে হালি পিঁয়াজের শুরু করেছেন।
জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় শত বছর ধরেই পিঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয় এই উপজেলার হালি পিঁয়াজ ও কন্দ পিঁয়াজ (শাখা পিঁয়াজ)।
উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কয়েক হাজার কৃষক বিভিন্ন জাতের হালি পিঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন। তবে পিঁয়াজের হালির দাম বেশি হওয়ায় এবং দিনমজুরদের মজুরি মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় উৎপাদন খরচ নিয়ে হিশশিমে পড়েছেন কৃষকেরা। এতে ফলন ভাল হলেও পিঁয়াজের দাম নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন পিঁয়াজ চাষীরা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ক্ষেতে কৃষকেরা দলবেঁধে সকাল থেকে সন্ধ্যা পিঁয়াজের হালি রোপণ করছেন। অনেকে আবার পিঁয়াজ লাগানো শেষে ক্ষেতের আদ্রতা বাড়াতে পানি দিচ্ছে। পিঁয়াজ চাষীদের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে এ উপজেলার কৃষকেরা ফরিদপুর থেকে ৫ হাজার টাকা করে সুপার কিং পিয়াজের দানা এনে রোপন করেন। যা বর্তমানে ১৬ হাজার টাকা দরেও কৃষকদের কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও অনেক কৃষক ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা মন পিঁয়াজের হালি কিনেও পিঁয়াজ চাষ করছেন।
তবে এক বিঘা জমিতে ৪ থেকে ৫ মন হালি লাগে। এতে করে এক বিঘা জমিতে পিঁয়াজ চাষে প্রায় ৫০- ৬০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আবাদ ভাল হলে প্রতি বিঘায় সুপার কিং ৫০-৭০ মন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। প্রতিমণ পিঁয়াজ আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে না পারলে কৃষকদের মোটা অংকের টাকা লোকসান হতে পারে ধারণা করছেন একাধিক কৃষক।
উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ভাদিয়াখোলা গ্রামের মোজাহার হোসেন জানান, আমি এক বিঘা জমিতে হালি পিঁয়াজ চাষ করেছি। পিঁয়াজের দানা এবং হালির যে দাম তাতে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। পিঁয়াজের বাজার যদি চড়া না হয় তাহলে আমাদের অনেক লোকসান হবে। তারপরে প্রাকৃতিক বৈরি আবহাওয়ার একটা শঙ্কা তো থাকেই।
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ গোড়াইল এলাকার ইব্রাহিম জানান, আমি তিন বিঘা জমিতে হালি পিঁয়াজের চাষ করব। ইতোমধ্যে দুই বিঘা লাগানো হয়েছে। সবমিলিয়ে তিন বিঘা জমিতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকার ওপরে খরচ হবে। এতে করে দাম ভাল না পেলে, সব কৃষকেরই লোকসান হবে। আশা করছি, ফলন ভাল হলে আর দামের বাজার যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে কৃষকেরা লাভবান হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা, চলতি অর্থবছরে এ উপজেলায় প্রায় ২৮৩০ হেক্টর জমিতে হালি পিঁয়াজ চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান জানান, হরিরামপুর উপজেলায় ঐতিহ্যগতভাবে অনেক আগে থেকেই হালি পিঁয়াজের চাষে কৃষকদের সুখ্যাতি রয়েছে। এর ফলেএ উপজেলার কৃষকদের সবসময় কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। আশা করি এ বছর উপজেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলার চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও কৃষকদের যেন হালি পিঁয়াজে লোকসান না হয়, সে জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ারও চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।
আরও পড়ুন: