মানিকগঞ্জে যুবদল নেতার মামলায় দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষে শুনানি এবং জামিন করানোয় বিতর্কে জড়িয়ে পরেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড.মেজবাউল হক। এঘটনায় তাকে দল থেকে বহিস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলও পালিত হয়েছে।
২৯ জানুয়ারি (বুধবার) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার ব্যানারে শহরের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত চত্বরে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী, বিএনপি অনুসারী শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও ছাত্রদল কর্মীরা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে বিএনপির নেতার গাড়ীতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর দৌলতপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো.শাহিন আলম মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নাইমুর রহমান দুর্জয়সহ ১২৯ জনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ.কে.এম আজিজুল হক, ধামশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. ইদ্রিস আলী, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ছানোয়ার হোসেন, কলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, জিয়নপুর আওয়ামী লীগের বেলায়েত হোসেন ও বাঘুটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আখিনুর রহমান। পরে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে আদালতের বিচারক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ.কে.এম আজিজুল হক, ধামশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. ইদ্রিস আলী ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.ছানোয়ার হোসেন জামিন দেন।মামলার বাকি তিন আসামীকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক লিয়াকত আলী মোল্লা।
এবিষয়ে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড.আজাদ হোসেন খান জানান, বিএনপির নেতার গাড়ী ভাঙচুর মামলায় আওয়ামী লীগের ৬জন নেতাকর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে জামিন না মঞ্জুর করে আদালতের বিচারক তাদেরকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড.মেজবাউল হক। জেলার দায়িত্বশীল নেতা হয়ে যদি আওয়ামী লীগের পক্ষে দাড়ায়, তাহলে দলের জন্য অমঙ্গল হবে এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। সুতরাং জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উচিৎ হবে, যারা এধরনের কাজে জড়িত। তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করা। যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।
এবিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এ. এফ. এম নুরজাত আলম বাহার জানান, ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে বিরোধীতা করেছি। মামলায় আসামী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড. মেজবাউল হক, এ্যাড.নজরুল ইসলাম বাদশা ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এ্যাড.আবুল কাশেমসহ কয়েকজন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিয়েছিল।
তবে এবিষয়ে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড.মেজবাউল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ. এস জিন্নাহ কবীর জানান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড. মেজবাউল হক দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য আদালতে জামিন শুনানি করেছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। একারণে বুধবার তাকে দলীয়ভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে এবং আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হবে। তার জবাবের উত্তর পেলে কেন্দ্রে বিষয়টি জানানো হবে।
তবে মামলার বাদী মো.শাহিন আলম জানান, দলের সিনিয়র লিডাররা যদি এমনভাবে স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করে। তাহলে আমাদের মতো নেতাকর্মীরা অবস্থা কি হবে। এতে করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ বাড়বে এবং আওয়ামী লীগ প্রশ্রয় পাবে। তাতে দলের জন্য অমঙ্গলজনক হবে।
আরও পড়ুন: