
দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে কারখানা অবস্থিত নীলফামারীর সৈয়দপুরে। বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাটি আজ প্রায় ধ্বংসের পথে। অযন্তে অবহেলায় চরম বেহাল দশায় নিপতিত ঐহিত্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি। রেলওয়ে কারখানার উন্নয়নে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার দাবি উঠেছে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বর্তমান অন্তবতীকালীন সরকারের প্রতি।
রেলওয়ে কারখানা সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় লোকবলের চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র ২৬ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ধুকে ধুকে চলছে কার্যক্রম। প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ না দেয়ায় চাহিদা অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ ও উৎপাদন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্বেও কারখানার অধিকাংশ সপ অচল করে রাখা হয়েছে।
বিশেষ করে মেশিন টুলস সপে রেলওয়ের সকল যন্ত্রাংশ তৈরির ব্যবস্থা থাকলেও সব ধরণের যন্ত্রপাতি বাইরের ঠিকাদারের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগে সরবরাহের সিস্টেম চালু করা হয়। এতে রেলওয়ে যেমন রাজস্ব হারিয়েছে তেমনি কর্মচারীরা কাজ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এহেন পরিস্থিতিতে কারখানার ২৬ টি সপের (উপ-কারখানা) প্রায় সিংহভাগই কর্মহীন হয়ে পড়ে আছে। স’মিল সপ দীর্ঘদিন থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে আছে। এতে ওইসব সপের অধিকাংশ মেশিন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দিয়ে অনেক ভালো মেশিনকেও অকেজো দেখিয়ে বিদেশ থেকে নতুন মেশিন ক্রয় করা হয়েছে।
আমদানিকৃত মেশিনগুলোও দক্ষ জনবলের অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে। এতে করে রেলওয়ের বিশাল অংকের অর্থ অপচয় হয়েছে। একইভাবে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্য করার মাধ্যমে দলের নেতারা উপকৃত হলেও নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা দক্ষ ও যোগ্য না হওয়ায় কারখানার কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। আর পুরাতন অভিজ্ঞ লোকজন অবসরে যাওয়ায় মেশিন চালনায় জটিলতার কারণে উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। এই অজুহাতে সপগুলোর উৎপাদন বন্ধ রেখে শুধুমাত্র মেরামতের কাজ চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারী ভিত্তিতে কয়েকটি কোম্পানীকে চুক্তি করে মেরামতের কাজ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সৈয়দপুর উপজেলা আমীর হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম বলেন, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও বাজেট বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করলে টেকসই উন্নয়ন সাধিত হবে। তাই এ ব্যাপারে বর্তমান সরকার সুদৃষ্টি দিবেন বলেই আমি আশা করি।
সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গফুর সরকার বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানাই যে, শ্রমিক ও কাঁচামাল দিয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে সচল করতে হবে। টেন্ডার দিয়ে সাবেক ডিএস এবং ডাব্লু এম যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দূর্নীতি করেছেন। যার কারণে আজ রেলওয়ে কারখানায় অচলাবস্থা। এসকল অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে দায়ী কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) মোস্তফা জাকির হাসান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই জাতীয় সম্পদটিকে রক্ষায় প্রয়োজন জরুরী ভিত্তিতে গুরুত্ব দিয়ে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে চাহিদা মত মালামাল সরবরাহ করা এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনবল নিয়োগ দিয়ে পুরোদমে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা। তাহলে যেমন কারখানার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে তেমনি বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রয়োজনীয় গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেবার মান বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন: