শুক্রবার

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
১৬ ফাল্গুন, ১৪৩১
,

জামালপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৯, সম্মেলন স্থগিত

জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ১৮:৪১

শেয়ার

জামালপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৯, সম্মেলন স্থগিত
বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৯।

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৯ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে তেঘরিয়া সাহেদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ১নং চরপাকেরদহ ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের প্যান্ডেল প্রস্তত করার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন স্থগিত করেছে উপজেলা বিএনপি।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, তেঘরিয়া সাহেদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চরপাকেরদহ ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ মো. মজনু (ফকির) ও যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব তরফদার দুজনই নিজেদেরকে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা করেন।  গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের প্যান্ডেল ও মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ চলছিল। এ সময় সভাপতি পদপ্রত্যাশী মজনু ফকির ও বিপ্লবের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ বাধে। পরে মাঠে বিকট শব্দে দুইটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনা যায়। সম্মেলনের জন্য মাঠে রাখা প্রায় দুই হাজার চেয়ারে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। স্কুল মাঠে সম্মেলনের জন্য তৈরি করা মঞ্চ এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ মো. মজনু ফকির ও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব তরফদার একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন।

সংঘর্ষে আহতরা হলেন- মাদারগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ (২২), বালিজুড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আল আমিন চৌধুরী (২২), যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম (৪০), ছাত্রদল নেতা শ্যামল মিয়াকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আব্দুস সোবহান (৪১) নামের এক নেতার মাথায় গুরতর জখম হয়েছে। আহত অন্যান্য নেতাকর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।

সম্মেলনের মাঠে প্যান্ডেলের কাজ করা ডেকোরেটর মালিক জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, গতকাল রাতে বিএনপির সম্মেলনের জন্য প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরির কাজ করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ কিছু লোক এসে কিছু একটা ফুটায় ও মাঠে থাকা চেয়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তেঘরিয়া বাজারের ভেতর থেকে আরও কয়েকশ মানুষ মাঠে এলে সংঘর্ষ হয়। মাঠে লাইট না থাকায় কাউকে চিনতে পারিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেঘরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. মজনু ফকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনের জন্য তেঘরিয়া সাহেদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। ইউনিয়ন বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মী নিয়ে অফিসে বসেছিলাম। রাত ৯টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। পরে মানুষের চিৎকার শুনে মাঠে গিয়ে দেখি উপজেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মুখলেছুর রহমান, ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব তরফদার, হুমায়ুন ও স্বপনসহ আরও কয়েকজন সম্মেলন মাঠে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও চেয়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিলে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন স্থগিত করার জন্যই তারা এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। শাহ মোহাম্মদ মোস্তাক কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না বলেও জানান শাহ মো. মজনু ফকির।

তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব তরফদার বলেন, ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে রাতে মিতালী বাজারে যাই। আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরির কাজ পরিদর্শন করার জন্য স্কুল মাঠে গেলে মজনু ফকিরের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ মোস্তাক অতর্কিত হামলা করে। এতে আমাদের সাতজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। মজনু ফকিরের লোকজনই প্যান্ডেল ভাঙচুর করে ও চেয়ারে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমাদের নেতাকর্মীদের ছয়টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে মজনু ফকিরের লোকজন। এখনো পর্যন্ত আমাদের তিনটি পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, মাঠে ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মজনু ফকিরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ মোস্তাককে বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মজনু ফকির উঠেপড়ে লেগেছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য উপজেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমানের মোবাইলে একাধিকার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, চরপাকেরদহ ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মাদারগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন ঢাকা পোস্টকে জানান, ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সম্মেলনের মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।