
প্রয়োজনীয় অপারেশন থিয়েটার না থাকায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে প্রাণী সম্পদ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরেই গাছ তলায় চলছে পশু অপারেশনের কাজ। এতে করে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরছে পশু চিকিৎসা সেবা।
জানা যায়, কৃষি নির্ভর এ উপজেলায় প্রায় তিন লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। কৃষিকাজের পাশাপাশি এ উপজেলায় হাঁস, মুরগী, গবাদিপশু পালন, খামারি ও খামারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণির অর্ধশতাধিক প্রাণীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত গরু ছাগলকে করতে হয় অপারেশন। তবে প্রয়োজনীয় অপারেশন থিয়েটার না থাকায় প্রাণী সম্পদ বিভাগের চত্বরে গাছ তলায় করতে হয় অপারেশন।
১২ মার্চ (বুধবার) দুপুরে উপজেলার প্রাণী সম্পদ বিভাগে সরেজমিনে গেলে খোলা আকাশের নীচে গাছতলায় স্টিলের তৈরি বেঞ্চের ওপরে একটি ষাঁড় বাছরকে অপারেশন করতে দেখা যায়। পাশেই উপজেলার তন্ত্রখোলা থেকে কৃষক আফসারের একটি ষাঁড় বাছুর মাটিতে ফেলে হারনিয়া অপারেশনের জন্য প্রস্ততু নিতে দেখা যায়।
মৌসুমের বিভিন্ন সময়ে গবাদি পশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, পাতলা পায়খানা ও পিপিআরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় প্রাণী সম্পদ হাসপাতালগুলোতে ভিড় করে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন অর্ধশতাধিক পশু চিকিৎসাসেবা নিলেও মাসে প্রায় গড়ে প্রায় সহস্রাধিক গৃহপালিত প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব গৃহপালিত প্রাণীদের সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবা দিতে উপজেলার চিকিৎসকসহ মোট ১১টি পদ থাকলেও ভেটেরিনারি সার্জনসহ বিভিন্ন পদের সংখ্যা ৪টি পদ রয়েছে শূন্য। ফলে জনবল সংকটে অনেক সময় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয় বলেও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়।
অপারেশন থিয়েটার না থাকায় হারনিয়া, টিউপসিস্টোটোমি, অ্যাপসেস, অ্যাট্টেশিয়া অ্যানাই, সিজারিয়ান অপারেশনসহ নানাবিধ অপারেশন করা হয় খোলা আকাশের নীচে। অপারেশনের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ না থাকায় অপারেশনকৃত গবাদিপশু ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে বলে দাবি করেন পশু চিকিৎসকেরা।
উপজেলার বয়রা ইউনিয়নের খালপাড় বয়রার আজমত আলী জানান, তিন দিনে আগে সাটুরিয়া উপজেলা হরগোজ হাট থেকে ৫৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাড় কিনেছি। কিন্তু পেটে প্রস্রাব আটকে থাকায় পেট ফুলতে থাকে। আজ অপারেশন করালাম। অপারেশনের আলাদা জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নীচেই অপারেশন করা হয়। পশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অপারেশনের জন্য আলাদা একটা রুম হলে ভাল হয়।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জহুরুল হক জানান, এ উপজেলায় হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশুসহ প্রায় ২ হাজার খামার রয়েছে। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খামারীরা আসেন। তবে এখানে জনবল কিছুটা কম আছে। পাশাপাশি বড় সমস্যা হলো এখানে একটা অপারেশন থিয়েটার জরুরি। অপারেশন থিয়েটার না থাকায় খোলা আকাশের নীচে অপারেশন করতে হচ্ছে। এতে করে সময় পশুর ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে।
অপারেশন থিয়েটারের জন্য গত বছর মাসিক সমন্বয় সভায় বিষশটি আলোচনা করেছিলাম। পরবর্তী আর অগ্রসর হয়নি। কিছুদিন আগে ইউএনও স্যারকেও বিষয়টি অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার জানান, আমি যোগদান করার পরে বিষয়টি আমাকে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পরবর্তীতে নতুন কোনো প্রকল্প পেলে আমরা একটা সেড নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করব, ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন: