
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম একটানা ১৩ বছর সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মায়া চৌধুরী যখন দূর্যোগ ব্যস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রী ছিলেন, তখন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ছিলেন, কাজী আব্দুল ওয়াহিদ মো. সালেহ। সে সময় মায়া চৌধুরীর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওই শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে জোর করে পাস ওয়ার্ড নিয়ে তিনি নিয়োগ বনিজ্য, এমপিও, উচ্চতর স্কেলের কাজ করার জন্য নিয়ম বর্হিভূত ভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে ফাইল পাঠাতেন।এখনো টাকা ছাড়া ফাইল পাঠায় না বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান।
তার অফিসে সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত ২ জন পিয়ন থাকার পরও ছোট শাহজাহান নামে একজন
পিয়ন খন্ডকালিন রেখেছেন। তাঁর মাধ্যমে নিয়োগ বানিজ্যের ফাইল আদান প্রদান করে। শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করেন।
তার নিয়োগ বাণিজ্যের ধরন হচ্ছে কয়েকজন প্রার্থীর কাছ খেকে মোটা অংকের টাতা নিবে। পরে যেটা নিয়োগ হবে তার টাকা রেখে অন্যদের টাকা ফেরত দিবে।
একটানা ১৩ বছর সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে থাকার পর ২০২০ সালে বদলী হয়ে যান। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক মন্ত্রী মায়া চৌধুরী এমপি হওয়ার পর পুনরায় তার আর্শিবাদ নিয়ে মতলব উত্তর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে আশরাফুল আলম যোগদান করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,তিনি ২০০৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত সহকারি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ।
স্বৈরাচারের দোসর তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ জনের মাধ্যমে ২০২১ সালে লক্ষীপুর সদর উপজেলায় বদলী হন।
২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি সাবেক মন্ত্রী মায়া চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হলে পুনরায় আশরাফুল আলম মতলব উত্তরে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে একই বছরের ৪ এপ্রিল যোগাদান করেন।
তিনি নিয়ম বহির্ভুত ভাবে ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অথচ ম্যানুয়ালে রয়েছে, প্রথম শ্রেনির কর্মকর্তা ব্যতিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবে না। তিনি ১০ম গ্রেডে সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত ।
নিয়ম বহির্ভুত ভাবে তিনি অলিপুর, সিদ্দিকা বেগম বালিকা,ইন্দুরিয়া,হাজী সিদ্দিকুর রহমান, দূর্গাপুর জনকল্যান, শিকারী কান্দি আকবরিয়া,সুজাতপুর নেছারিয়া, বাগানবাড়ি আইডিয়েল একাডেমী ও নীলনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন কিভাবে এটা অনেকেরই প্রশ্ন?
তিনি ১০ম গ্রেডে চাকরি করে ঢাকায় ৪৫ হাজার এবং মতলব উত্তরে ৫ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া থাকেন। তার বিরুদ্ধে শীতকালীন খেলাধুলায় ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তিনি মতলব উত্তর উপজেলার ৪০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১২ টি মাদরাসার প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন।এ ছাড়াও সরকারি বরাদ্দ পায় ২৫ হাজার টাকা। এতে ২ লাখ ৩৩ হাজর টাকা পেয়েছেন। অথচ দায়সারা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করেন।এতে নিম্ন মানের পুরস্কার বিতরণ করেন বলে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ।
তিনি বিভিন্ন হাই স্কুলের ইউনিক আইডির আড়াই লাখ টাকা আত্মসাৎ করার জন্য তার অনুগত কয়েকজন প্রধান শিক্ষক কে নিয়ে সাজেক ভ্যালীতে ৩ রাত ২ দিন থাকেন।অথচ শিক্ষকদের তিনি বলেছেন, ৬ হাজার করে চাঁদা লাগবে।যাতে সবাই শিক্ষা সফরে না যায়।
তিনি কৌশলে প্রধান শিক্ষকদের শীতকালীন প্রাইজ না দিয়ে আরো ৫শ করে চাদা নিয়ে সিলেট শিক্ষা সফরে যান।সেখানে ৩ রাত ২ দিন থাকেন।
চাঁদপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের আগমন উপলক্ষে আপ্যায়নের কথা বলে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে ২শ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধান শিক্ষকরা জানান।
২০২৪ সালের জুন মাসে মতলব উত্তরের ১৬০ জন শিক্ষকের ট্রেনিং ছিল। সেখানে তিনি ২০০ টাকার স্থলে ১০ টাকার প্যাড দিয়ে ট্রেনিং চালিয়েছেন। অন্যান্য উপকরণ ও ছিল খুবই নিম্ন মানের। এতে ৩০ হাজর ৪শ টাকা আত্মসাৎ তরেন।
এ ছাড়াও তাদের প্রত্যেকের খাবার বাবদ ৩৫০টাকা বরাদ্দ হলেও ১৫০টাকার খাবার দেন। অবশিষ্ট জনপ্রতি ২০০ টাকা করে মোট ৩২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে ছেংগারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ জন পিয়ন শিক্ষকদের ট্রেনি কাজ করলেও তারা কেউ টাকা পায়নি। অথচ তাদের নামে সরকারি বরাদ্দ ছিল। পানি বাবদ শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা তুলে পিয়নদের কে দেন।
এছাড়াও ট্রেনিংয়ে রুম ভাড়া, প্রজেক্টর ভাড়া ও বিভিন্ন অতিথিদের আনুষঙ্গিক সব টাকা ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম একাই আত্মসাৎ তরেন। ।
আরও পড়ুন: