রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

আওয়ামী নেতাদের তদবির শুনতে ব্যস্ত বিএনপি নেতার মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ মার্চ, ২০২৫ ২০:১০

শেয়ার

আওয়ামী নেতাদের তদবির শুনতে ব্যস্ত বিএনপি নেতার মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম
ছবি: বাংলা এডিশন

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের (জীবননগর-দামুড়হুদা) ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক এমপি আলি আজগর টগরের আস্থাভাজন হিসেবেই পরিচিতি ছিলেন সাংবাদিক মিথুন মাহমুদ। বিতাড়িত আওয়ামী সরকারের আমলে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার সাইনবোর্ড ব্যাবহার করে সাবেক এমপির মাধ্যমে বাগিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদারি লাইসেন্স। নিয়েছেন টিসিবি এবং ওএমএস এর লাইসেন্স। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সাংবাদিককতার পাশাপাশি দাপট দেখিয়েছেন উপজেলা জুড়ে।

আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার আগেও সহকর্মীদের দেখাতেন দলীয় নানা ভয়ভীতি। জামায়াত শিবির ট্যাগ দিয়ে দমিয়ে রাখতে চাইতেন সহকর্মীদের। সরকার পতনের আগের রাতেও সহকর্মীদের ফেসবুক পোস্ট দেয়ার কারণে শাশিয়েছেন নানা ভাবে।

গেল বছরের ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন হলে একটি মামলার আসামী হন আওয়ামী দোসর হিসেবে স্বীকৃত সাংবাদিক মিথুন মাহমুদ। মামলা হওয়ার পর পেশাগত দিক থেকে বেশ কিছুদিন নিরব ছিলেন।

তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফের মালিকানাধীন সময়ের সমীকরণ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার সুবাদে আবারও দাপট দেখাতে শুরু করেছেন পতিত সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত এই সাংবাদিক। আর শৈরাচারের এই দোসরকে নানা ভাবে সহায়তা করছেন পত্রিকাটির বার্তা বিভাগে কর্মরত মেহেরাব্বিন সানভি।

সম্প্রতি টিসিবির পণ্য বিক্রিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে মিথুন মাহমুদের বিরুদ্ধে। মিথুনের আষ্টেপৃষ্টে আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড লেগে থাকায় অপ্রিতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কতৃপক্ষ তার টিসিবির ট্রাক সেল প্রজেক্টটি সাময়িক বন্ধ রাখেন। তবে তার রেগুলার সেল চালু ছিলো।

এতে করেই ক্ষেপে যান সাংবাদিক মিথুন মাহমুদ। তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল আমিনের ওপরে। সময়ের সমীকরণ পত্রিকার বার্তা বিভাগের মেহেরাব্বিন সানভিকে ইউএনওর দপ্তের এনে তদবির করান। কৈফিয়ত চান কেন বন্ধ রাখা হয়েছে মিথুনের ট্রাক সেল। সেদিন ইউএনও এর সাথে তারই কক্ষে অসদাচরণ করেন মিথুন মাহমুদ।

এদিকে মেহেরাব্বিন সানভি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাথে মিথুন মাহমুদকে কোনো সম্পৃক্ততা নেই সেটা প্রমানের চেষ্টা করেন। তার পক্ষে সাফাই গান। মিথুনের ট্রাক সেল কর্মসূচি চালু করতে ইউএনওকে নানা ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তবে ইউএনও আল আমিন ট্রাক সেল কেন বন্ধ তা যৌক্তিক ভাবে বুঝিয়ে দেন। তারপরেও মিথুন মাহমুদ অসদাচরণ করেন ইউএনওর সাথে।

তাতক্ষনিক সানভির কথার প্রতিবাদ করেন সেখানে উপস্থিত থাকা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও উপস্থিত সেবা প্রত্যাশীরা। গেল ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মিথুন মাহমুদ কতটা সুবিধা নিয়েছেন তা উল্লেখ করেন উপস্থিত সবাই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল আমিন বলেন, টিসিবির পন্য বিতরণে অনিয়মের কারণে তার (মিথুন মাহমুদের) ট্রাক সেল সাময়িক বন্ধ থাকে। তবে নিয়মিত সেল চালু ছিলো। কি কারণে তার ট্রাক সেল বন্ধ আছে সেটার ব্যাখ্যা দিয়েছি।

তিনি বলেন, উনি মনে করেন আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে তার ট্রাক সেল বন্ধ রেখেছি। যেটা সত্য নয়। বিএনপি নেতার পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন সেই সুবাদে তিনি ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। ব্যাপারটা নিয়ে তিনি আমার দপ্তরে বসেই আমার সাথে অসদাচরণ করেন। একইসাথে পত্রিকা অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট একজনকে এনে আমাকে তদবির করেন। তবে সে ব্যাপারে আমি সুস্পষ্ট জবাব দিয়েছি।

ইউএনও আরও বলেন, মিথুন মাহমুদের অসদাচরণের ব্যাপারে আমি সময়ের সমীকরণ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক শরিফুজ্জামান সাহেবের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি আশ্বাস দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। যেটা খুবই দুঃখজনক। বিগত সরকারের আমলে সুবিধা নেয়া ব্যাক্তির পক্ষে তদবির করা মানে ফ্যাসিস্টদের পূনর্বাসন করা।

এদিকে ইউএনওকে হেনস্থা করতেই গত ১১ই মার্চ সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রথম পাতায় ' জীবননগরে ইউএনওর বাস ভবনের পিছনে মাদকের আখড়া, প্রশাসনের নিরবতায় এলাকাবাসীর অসন্তোষ' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার হয়। যেটি ইউএনও আল আমিন হলুদ সাংবাদিকতা বলে আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি বলেন, সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রতিবেদনে আমাকে জড়িয়ে যা বলা হয়েছে আমার মনে হয় সেটা হলুদ সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে। আমাকে হেও করতেই এমন একটা সংবাদ প্রচার হয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি আমি জানতাম না।

তিনি আরও বলেন, আমার বাসভবনের পিছনে যে স্থানে মাদকের আখড়া বলা হয়েছে সেটা জীবননগর আম বাজারের মধ্যে। মাদকের আখড়া হলে সেখানে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে অভিযান চালাতে পারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি। আমার তো ইন্টেলিজেন্স নেই যে আমি এগুলোর ব্যবস্থা নেব। 

আর আমার কাজ হলো বিচার করা। এমন সংবাদ প্রকাশ হলুদ সাংবাদিকতার সামিল। আমি বিষয়টি সময়ের সমীকরণ কতৃপক্ষকে জানিয়েছি।

এদিকে মিথুন মাহমুদের সাথে ইউএনও আল আমিনের একটি কথোপকথনের অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেটা গোপনে ধারণ করেছেন সাংবাদিক মিথুন মাহমুদ। যেটা মাইনর এ্যাক্ট হিসেবে শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে জানিয়েছেন ইউএনও আল আমিন।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৩ অনুযায়ী ‘চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার’ রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের। অর্থাৎ, ফোনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের গোপনীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখার নিশ্চয়তা দেয় আইন। তার মানে, ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া ফোন আলাপ বা কথোপকথন রেকর্ড করা এবং রেকর্ড ছড়িয়ে দেয়া, আইনত অপরাধ।

আইনজীবীরা বলছেন, অনুমতি ছাড়া কারো ফোন আলাপের রেকর্ড বা গোপনে ধারণকৃত রেকর্ড ছড়িয়ে দিলে তিনি প্রচলিত আইন অনুযায়ী মানহানির মামলা করতে পারেন।

আওয়ামী দোসরকে সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ এবং সময়ের সমীকরণ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক শরীফুজ্জামান শরীফের বক্তব্য নিতে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে সেদিন ইউএনওর অফিসে উপস্থিন থাকা  জীবননগর সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি ফয়সাল মাহাতাব মানিকের উপর ব্যাক্তিগত আক্রমনের চেষ্টা করেন সানিভি। কোনো কারণ ছাড়াই মানিককে হুমকি দেন তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করার।

এ প্রসঙ্গে ফয়সাল মাহাতাব মানিক বলেন, উনি কেন আমার সাথে এমন করলেন জানিনা। আমার সাথে তার কোনো ব্যাক্তিগত ঝামেলা নেই। আমি সাংবাদিক সমিতির নেতৃত্ব দিচ্ছি সেই ক্ষেত্রে পেশাগত শত্রু ভাবতে পারেন আমাকে। এহনে আচরণের নিন্দা জানাচ্ছি।

banner close
banner close