রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

সিগারেট গাজার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর : ফরহাদ মজহার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধ

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ, ২০২৫ ১৭:৪৪

শেয়ার

সিগারেট গাজার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর : ফরহাদ মজহার
সিগারেট গাজার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর : ফরহাদ মজহার

কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, দিল্লির নীতি হচ্ছে লালনদের গাজাখোর হিসেবে প্রমাণ করা। যারা নিজেকে ইসলামপন্থী বলে দাবি করেন, অতিরিক্ত ধর্মপ্রাণ বলে দাবি করেন, তথাকথায় লালন পন্থীদের গাজাখোর বলে গালি দেন, নিন্দা করেন। তারা মনে রাখবেন, এটা দিল্লির রাজনীতি, দিল্লি এটাই করে। কারণ দিল্লি তার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এটা করে। লালন সাঁইজির ভাব চর্চার মধ্যে কোনোপ্রকার নেশা দ্রব্যের কোনো স্থান নাই। যারা ভাবের নেশায় নেশাগ্রস্ত না। যারা গাজার নেশায় বুদ, তারা লালনের ঘরের কেউ না। যেটা আমাদের ধর্ম নয়, যেটা আমাদের ঘরের নিয়ম নয়, যেটা আমাদের বিধান নয়। সেটা কড়াভাবে পরিহার করবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা অত্যান্ত নিরীহ৷ কেউ গাজা খেলে তাকে খারাপ মনে করি না। কারণ মহাদেব গাজা খেতেন। তার আলাদা তাৎপর্য আছে, একটা ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে। গাজা মানে খারাপ না, সিগারেট গাজার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর। যেকোনো নেশা যদি আপনার থাকে তাহলে আপনি জ্যান্ত মরা না। জ্যান্ত মরা মানে আপনি নেশা থেকে মুক্ত।

বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের স্মরণোৎসব উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউরিয়ায় লালন একাডেমির মিলনায়তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি এ স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে।

লালনভক্তদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, এই ধারাতে কোনো তথাকথিত চিরন্তন, চিরস্থায়ী, শ্বাশ্বত মতাদর্শে বিশ্বাস করে না। তারা গুরুবাদী। গুরুবাদী মানে তারা শুধু জীবন্ত মানু্ষের ভোজন করে। গুরু আপনাকে যেটা করতে বলেছেন, এটা করবেন। আপনার গুরু আপনাকে যে মন্ত্র দিয়েছেন, সেই মন্ত্রে চলবেন। এটাকে লালনবাদ বানাবেন না। আমরা ফকির কখনোই লালনবাদ প্রচার করি না। এটা পরিষ্কার থাকা উচিত। লালনবাদ বলে কোনো ধর্ম নেই। এটা গুরুবাদী ধর্ম।

তিনি আরও বলেন, লালন আমাদের গঠন করতে চেয়েছিলেন। নতুন ধরনের সমাজ গড়ার কথা বলেছেন। নতুনভাবে রাষ্ট্র বানানোর কথা বলেছেন। সেই রাষ্ট্রে বা সমাজে কোনো পুলিশ লাগে না। এমন একটি সমাজের স্বপ্ন লালন দেখেছেন সেখানে পুলিশ লাগে না। কারণ আপনার মনে যদি পুলিশ থাকে, তাহলে বাইরে পুলিশ লাগবে কেন? তার মানে মনে পুলিশ নেই। আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আপনি উচ্ছৃঙ্খল।

জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মো. তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনু্ষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। অনু্ষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশিদুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম।

জানা গেছে, মরমি সাধক লালন শাহ তার জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমার রাতে শিষ্যদের নিয়ে রাতে কালীগঙ্গার ধারে সাধুসংঘে বসতেন। তারই ধারাবাহিকতায় লালন শাহের তিরোধানের পরও প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শেষদিকে লালনের আখড়াবাড়িতে দোলপূর্ণিমা বা স্মরণোৎসব উদযাপন হয়। সেই ধারাবাহিকতায় দোলপূর্ণিমা তিথিতে প্রতিবছর ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় ফকির লালন শাহ স্মরণোৎসব। সাধু-গুরু, লালনভক্তদের সরব উপস্থিতি, গান ও গ্রামীণ মেলায় জমজমাট হয়ে ওঠে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। এবার রমজানের কারণে একদিনই উদযাপিত হয় স্মরণোৎসব। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা। কেবল আলোচনা অনুষ্ঠান ও বাউলদের আপ্যায়নের মধ্য দিয়েই শুক্রবার (১৪ মার্চ) শেষ হবে আয়োজন। সাধুসঙ্গ চলবে রীতি অনুসারে।

এদিকে এই উৎসব উপলক্ষে কয়েক দিন আগে থেকেই আখড়াবাড়িতে আসতে শুরু করেছেন লালনভক্ত বাউল ফকিররা। তবে এবার আখড়াবাড়িতে ভক্তদের তেমন ভিড় নেই। রমজানের কারণে দর্শনার্থীদের আনাগোনা কম।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, প্রতিবছর দোলপূর্ণিমা তিথিতে মরমি সাধক ফকির লালন শাহের তিন দিনব্যাপী স্মরণোৎসব অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও সাড়ম্বরে উদযাপন হয়। তবে এ বছর দোলপূর্ণিমা পবিত্র রমজান মাসে হওয়ায় লালন স্মরণোৎসবে শুধু আলোচনা সভা ও বাউল আপ্যায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা ও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য রক্ষার্থে এ বছর বাউলদের মাগরিবের পরে এবং রাতে সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 

banner close
banner close