রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির "ঘুষ নির্ধারণ" বিতর্ক: সভাপতি ও সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ, ২০২৫ ১৭:২০

আপডেট: ১৮ মার্চ, ২০২৫ ১৩:২৪

শেয়ার

শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির
সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুল হাসান।

সম্প্রতি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির এক রেজুলেশনে আদালতের পেশকার ও পিয়নদের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের ঘুষ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে। এঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে। তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক'কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার (১৬ মার্চ) শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল বাশার মিঞা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম ও অ্যাডভোকেট সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুল হাসানকে এই নোটিশ প্রদান করেন।

জানাগেছে, গত ৬ মার্চ আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আদালতের পেশকার, পিয়ন ও জিআরওদের কাছ থেকে মামলা দায়ের, দরখাস্ত, জামিননামা দাখিল এবং গারদখানায় ওকালতনামা স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণের হার নির্ধারণ করা হয়। সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, সি.আর ফাইলিং: ১০০ টাকার বেশি নয় দরখাস্ত (জি.আর/সি.আর): ১০০ টাকার বেশি নয় জামিননামা দাখিল: ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে গারদখানা ও ওকালতনামা স্বাক্ষর: ১০০ টাকা সিভিল ফাইলিং: সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হলফনামা: ১০০ টাকা এই সিদ্ধান্তের রেজুলেশন কপি জজকোর্ট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পেশকার, পিয়ন এবং কোর্ট পুলিশের জিআরওদের কাছে বিতরণ করা হয়। এছাড়াও এটি আইনজীবীদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে উন্মুক্ত রাখা হয়। আইনজীবী সমিতির এই সিদ্ধান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। আদালতের কর্মচারীদের উৎকোচ নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নোটিশে বলা হয়, পরিমাণ যাই হোক না কেন, ঘুষ গ্রহণ ও প্রদানের যাবতীয় উদ্যোগ সমানভাবে বেআইনি ও নিন্দনীয়। বিচার বিভাগ যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা (Zero Tolerance) নীতি গ্রহণ করেছে, তখন এই ধরনের বেআইনি ও নৈতিকতা বিবর্জিত কার্যবিবরণী আইন পেশাকে কলুষিত করেছে এবং বিচার বিভাগের মর্যাদাহানি ঘটিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। অন্যথায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। রবিবার শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র আবুল বাশার মিঞা স্বাক্ষরিত দুটি কারণ দর্শানোর নোটি জারি করা হয়। একটি দেয়া হয় আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে আরেকটি দেওয়া হয় সাধারণ সম্পাদককে। আর অনুলিপি দেওয়া হয় জেলা ও দায়রা জজকে।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আমরা দুর্নীতি বন্ধ করার জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আদালতের সঙ্গে আমরা আইনজীবীরাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে "জিরো টলারেন্স" নীতিতে আছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তিন দিনের মধ্যেই লিখিতভাবে শোকজের জবাব দেব।

এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেমের বক্তব্যের জন্য বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা এতে অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

banner close
banner close