শুক্রবার

১১ এপ্রিল, ২০২৫
২৭ চৈত্র, ১৪৩১
১৩ শাওয়াল, ১৪৪৬

আজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু যমুনা রেলসেতু

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ, ২০২৫ ১১:৩২

শেয়ার

আজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু যমুনা রেলসেতু
আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু যমুনা রেলসেতু

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ মঙ্গলবার যমুনা নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে সকাল ১০টায় সেতুর পূর্ব প্রান্তে ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন প্রাঙ্গণে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেখানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে সেতুর উদ্বোধন করবেন।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি ও জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক আইট টেরুইউকি উপস্থিত থাকবেন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান এবং সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন।

পরে ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে পশ্চিম প্রান্তের সয়দাবাদ রেলস্টেশন পর্যন্ত উদ্বোধনী ট্রেনে অতিথিরা যমুনা রেলসেতু পার হবেন। সয়দাবাদ রেলস্টেশনে ১১টা ৪০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। পরে অতিথিরা দুপুর ১২টায় ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন পূর্ব প্রান্তে ফেরত আসবেন।

যমুনা নদীতে বর্তমান সড়কসেতুর পাশে নতুন এই রেলসেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই রেলসেতুতে আসা–যাওয়ার দুটি লাইন (ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক) রয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকেই নতুন সেতুর একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে আগামীকাল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে সেতুটির দুটি লাইনেই অব্যাহতভাবে ট্রেন চলাচল করবে।

যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, মূল সেতু পার হতে ট্রেনে লাগবে দুই-তিন মিনিট। সেতুর দুই পাড়ের স্টেশন সয়দাবাদ ও ইব্রাহিমাবাদের মধ্যে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। এই অংশ পার হতে ৭ মিনিটের বেশি লাগবে না। আগে যমুনা সড়কসেতু পার হতে ট্রেনের সময় লাগত ২০ থেকে ২৫ মিনিট। নতুন সেতু দিয়ে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি যাতায়াত সময়ও কমবে। নতুন সেতু চালুর ফলে পুরোনো যমুনা সড়কসেতুর রেলপথ দিয়ে আর ট্রেন চলাচল করছে না।

১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর সড়কসেতু চালু হয়। ওই সেতুতে শেষ মুহূর্তে রেল ট্র্যাক যুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৬ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ার পর সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। তখন থেকে সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করত। এ সমস্যার সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলসেতু নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থায়ন এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অর্থায়ন করছে ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

প্রকল্পের শুরুতে এই সেতুর নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নাম পাল্টে যমুনা রেলসেতু রাখা হয়। নতুন রেলসেতু ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে। এই সেতুতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, তারা সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল নির্ধারিত করে দিয়েছে। তবে এর চেয়েও কম গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।

এর আগে যমুনা সড়কসেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলাচল করেছে। চাহিদা থাকার পরও লাইন ও সেতুর সক্ষমতা না থাকায় ট্রেন বাড়ানো যায়নি। এমনকি ভারী মালবাহী ট্রেন চলাচলেও বাধা ছিল। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন সেতু দিয়ে অধিক ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন চালানো যাবে।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) গৌতম কুমার কুন্ডু বলেন, এই সেতুতে ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের এক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হলো। এখন থেকে এই সেতু দিয়ে অনেক কম সময়ে দ্রুত গতিতে ট্রেন পারাপার করতে পারবে। প্রতিদিন ৩০টি আন্তনগর ও ২টি কমিউটার ট্রেন যথারীতি এই সেতু দিয়ে চলাচল করবে।

banner close
banner close