সোমবার

৩১ মার্চ, ২০২৫
১৭ চৈত্র, ১৪৩১
,

পাসপোর্ট অফিসের টাকার কুমির হিসেবে পরিচিত যেসব কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ, ২০২৫ ২১:০৫

শেয়ার

পাসপোর্ট অফিসের টাকার কুমির হিসেবে পরিচিত যেসব কর্মকর্তা
ছবি : বাংলা এডিশন

পাসপোর্ট অফিসের সদ্য বরখাস্ত ডাটা অ্যান্ড পারসোনালাইজেশন সেন্টার পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক সাইদুল ইসলাম এবং সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন। পাসপোর্ট অফিসে টাকার কুমির হিসেবে পরিচিত তারা।

বিগত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মা খ্যাত এই তিনজন। অভিযোগ রয়েছে এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন তারা, যে অধিদফতরের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে অন্যান্য সব কর্মকর্তাই তটস্থ থাকতেন। ঘুষ, দুর্নীতি, নিয়োগ, এমনকি পদোন্নতি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা কামানোর অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। 

আর এসব কারণে বিগত সরকারের সময়েই দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এমনকি অধিদফতর থেকে চাকরিচ্যুতির আবেদনও করা হয় মন্ত্রণালয়ে। এত কিছুর পরও তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন এখনো।

পাসপোর্ট অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিগত সময়ে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, ডিবির হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ভাইসহ যতো বিতর্কিত পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে, এর সঙ্গে এই তিন কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। 

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক সাইদুল ইসলাম শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পুলিশের ডিআইজি হারুনের সঙ্গে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শ্রেণিতে পড়ালেখা করেছেন সাইদুল ইসলাম। জানা যায়, অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে শতশত কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন তিনি। 

দুদকে সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এর আত্মীয়ের সঙ্গে যোগসাজশে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, সাইদুল ইসলাম মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন নিজের পক্ষে নেয়ার জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন মহলে। 

সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জানা যায়, সাইদুল ইসলাম ময়মনসিংহ অফিসে কর্মরত থাকাকালে নিয়মনীতির কোনও তোয়াক্কা করতেন না। আরও অভিযোগ রয়েছে, যাছাই-বাছাই ছাড়া এবং ভুয়া এনওসির মাধ‌্যমে অর্ডিনারি ফি’তে জরুরি পাসপোর্ট ইস্যু করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। 

আর অবৈধভাবে আয় করা এসব অর্থ দিয়ে অল্প দিনের মধ‌্যে নিজ এলাকা সাঁথিয়ায় ১০ বিঘার ওপর পুকুর ক্রয়, কাশিয়ানি বাজারে ভবনসহ ১০ শতাংশ জায়গা ক্রয়, ২০ বিঘার ওপর ফার্ম, নরসিংদীতে ২৯ ও ৬৫ শতাংশ জায়গার ওপর কারখানা, উত্তরায় প্লট ও ফ্ল্যাট, ঢাকার বসিলা বেড়িবাঁধের পাশে চন্দ্রিমা হাউজিংয়ে ৫ কাঠার প্লট, শ্যাওড়াপাড়ায় ১৭ কাঠা জায়গা, মোহাম্মাদপুরের ইকবাল রোডে ২ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডিতে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক হন। যা তিনি নামে-বেনামে করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কারখানা স্থাপনের জন‌্য সাইদুল ইসলাম মেঘনা নদীর তীরে সাত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তার নিজের ও সন্তানের চিকিৎসা চলে সিঙ্গাপুরের ব‌্যয়বহুল হাসপাতালে। বিভিন্ন অফিসে চাকরির সুবাদে প্রায় ৩০ কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করার অভিযোগও রয়েছে সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এর মধ‌্যে তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬০ লাখ টাকা ও প্লট। তবে, চারদিকে খবর ছড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানে গিয়ে তাকে দায়মুক্তি দিতে যাচ্ছে দুদক। এ বিষয়ে সাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি তার।

banner close
banner close