
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় প্রকাশ্যে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণের সময় আটক ৪ যুবক। ছবি : বাংলা এডিশন
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় প্রকাশ্যে জুয়েল সরদার (৩২) ও ফয়সাল সরদার (২৪) নামে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় চার যুবককে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাত
১টার দিকে ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অপহরণকারীদের আটক করা হয়। এরআগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দারুল আমান বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে তিনজন পুলিশের কনস্টেবল বলে জানা যায়।
উদ্ধার হওয়া দুই ব্যবসায়ী হলেন- জুয়েল সরদার (৩২) ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকর কান্দি এলাকার মৃত সোহরাব সরদারের ছেলে ও ফয়সাল সরদার (২৪) একই এলাকার মোহাম্মদ কাসেম সরদারের ছেলে। তারা ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৯টার দিকে একটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। এ সময় আটজন যুবকের মধ্যে চারজন নেমে এসে জুয়েল ও ফয়সালকে জোর করে মাইক্রোবাসে উঠায়। রাত ১টার দিকে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডের দিকে পৌঁছালে স্থানীয়দের তোপের মুখে তাঁরা মাইক্রোবাস থামান। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তিনজনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। আর পাঁচজন পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে একজনকে শুক্রবার সকালে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন-কৌশিক আহমেদ সেতু (৩০) বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাট থানার গারফা এলাকার বাচ্চু মিয়া শেখের ছেলে, তিনি খুলনা জেলা পুলিশ লাইনসে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন, কাউসার তালুকদার (২৯) শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার মৃত আব্দুর রহমান তালুকদারের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন। রুবায়েত মীর (২৭) মাগুরা জেলার বাসিন্দা। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন। শরীফ হোসেন (৩৫) কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার আমৌদা এলাকার মৃত আনা মিয়ার ছেলে।
অপহরণকারী রুবায়েত মীর বলেন, কাউসার তালুকদার আমাদের বস। অপহরণের সময় যে টাকা পেয়েছিলাম তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।
প্রত্যক্ষদর্শী ফাহিম আব্বাস বলেন, এলাকায় ডাকাত পড়েছে শুনে আমি বাড়ি থেকে বের হই। পরে শুনি ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাদের তিনজনকে আটক করা হয়। পরে এলাকাবাসী তাঁদের পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়। এছাড়াও কয়েকজন পালিয়ে যান।
ওই দুই ব্যবসায়ীর চাচাতো ভাই মিজানুর রহমান বলেন, আমার চাচাতো ভাই জুয়েল ও ফয়সালের ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অপহরণের পর ফয়সালকে দিয়ে অপহরণকারীরা তার আপন ভাই স্বাধীন সরদারকে মোবাইল ফোনে কল করে। পরে ২০ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। তখন ব্যাংক, বিকাশ ও নগদ থেকে ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা পাঠানো হয় তাঁদের। পরে আরও টাকা দাবি করলে অপহরণকারীদের লোভ দেখিয়ে ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে আনা হয়। বাসস্ট্যান্ডে এলে জুয়েল ও ফয়সালকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা তিনজনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেন। আর পাঁচজন পালিয়ে যান। পরে একজনকে আটক করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ফয়সাল ও জুয়েল বলেন, আমরা কাপড় ব্যবসায়ী। দোকান থেকে রাতে কদরের নামাজ পড়ার জন্য বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। দারুল আমান বাজারের কাছে মদন বেপারীর বাড়ির সামনে পৌঁছালে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল আমাদের গতিরোধ করে, আমাদের মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। হাতে হাতকড়া পরিয়ে পিস্তল ঠেকিয়ে তারা ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। আমরা পুলিশের লোক। পরে সেখান থেকে আমাকে দিয়ে আমার ভাই স্বাধীনকে কল করায় তাঁরা। আমি ফোনে টাকা পাঠাতে বললে ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা পাঠানো হয়। পরে বাকি ৬ লাখ ৯ হাজার টাকার জন্য অপহরণকারীরা ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে আসেন। সেখানে আমরা মুক্তি পাই।
এ ব্যাপারে ডামুড্যা থানার ওসি হাফিজুর রহমান মানিক বাংলা এডিশন কে বলেন, দুজন ব্যবসায়ী রাতে দোকান থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে তাঁদের অপহরণ করা হয়। তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। অপহরণের ঘটনায় পুলিশ ও জনগণ চারজনকে আটক করেছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য রয়েছে। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুন: