বুধবার

২ এপ্রিল, ২০২৫
১৮ চৈত্র, ১৪৩১
৪ শাওয়াল, ১৪৪৬

প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে

বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার 

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ, ২০২৫ ১৪:৩০

আপডেট: ২৯ মার্চ, ২০২৫ ১৪:৩৪

শেয়ার

প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ছবি: বাংলা এডিশন

*পর্যটক বরণে প্রস্তুতি শেষ 

* নিরাপত্তা বিধানে তৎপর জেলা পুলিশ

* কোটি টাকার ব্যবসার আশা পর্যটন ব্যবসায়ীদের

* ৬০ শতাংশ হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসে অগ্রিম বুকিং

খরা কাটিয়ে ফের প্রাণচান্ঞল্য ফিরছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। গত এক মাসের পর্যটক শূন্যতায় ভুগা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে পর্যটকদের বরণ করে নিতে সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। পর্যটন ব্যবসায়ীদের আশা ঈদে পরে পর্যটন খাতে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হতে পারে। 

মূলত: শুক্রবার (২৮ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। এবার ঈদে সাপ্তাহিক ছুটি সহ ৯ দিনের ছুটির কবলে পড়ছে দেশ। তবে শুরুতে তেমন পর্যটকের চাপ না থাকলেও ১ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৫ দিন কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় থাকবে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট সমুহের কক্ষ অগ্রিম বুকিং হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত তারকামানের অনেক হোটেলের রুম বুকিং হয়েছে শতভাগ। অন্যান্য আবাসিক প্রতিষ্ঠানেও ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ বুকিং এর তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন এই ৫ দিন গড়ে লক্ষাধিক পর্যটক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন।

তাই ছুটিতে পর্যটকদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে হোটেল মোটেল রিসোর্ট, রেস্তোরা থেকে শুরু করে বার্মিজ পণ্যের দোকান সবখানে শেষ হয়েছে মেরামত কিংবা সাজ-সজ্জার কাজ।

কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে ১ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটক থাকবে। যারা ইতিমধ্যে বুকিং দেয়া শুরু করেছে। এতে ৫ দিনে সাড়ে ৭ লাখের কম-বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে।

পর্যটক বাড়লে কিছু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতি হোটেলের কক্ষভাড়ার তালিকা টাঙানো থাকে। পর্যটকেরা তালিকা দেখে কক্ষভাড়া পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া থাকে। অনলাইনেও অধিকাংশ হোটেলের কক্ষভাড়া অগ্রিম বুকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

হোটেল সী-গালের ম্যানেজার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ঈদুল ফিতরের পরপর দুইদিন পুরো হোটেলের শতভাগ রুম বুকিং হয়েছে। এখন এর পরের তারিখগুলোর রুম বুকিং চলছে। আশা করি, ঈদের পরবর্তী সপ্তাহখানেক পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকে ভরপুর থাকবে।

হোটেল কক্স-টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, হোটেলে মেরামতের কাজ থেকে শুরু করে সুইমিং পুল পরিষ্কার এবং রুমগুলোতে রংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন পুরোপুরি প্রস্তুত পর্যটকদের স্বাগত জানাতে। রুম বুকিংও হচ্ছে।

লাবণী পয়েন্টের বার্মিজ পণ্যের ব্যবসায়ী আব্দু রশিদ বলেন, রমজানে পর্যটক না থাকায় দোকানের মেরামতের কাজ করেছি। এখন নতুন নতুন পণ্য যেমন আচার, বাচ্চাদের খেলনা, জুতা, কাপড় এগুলো সাজানোর কাজ করছি। আশা করি, এবারের ঈদে ভাল ব্যবসা হবে।

সুন্দরবন শুটকি দোকানের ব্যবসায়ী শরিফ বলেন, প্রচুর পরিমাণ লইট্টা, ছুরিসহ ১০ ধরণের শুটকি দোকানে তুলেছি। ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা কক্সবাজার আসলে এসব শুটকি ক্রয় করবে, এজন্য শুটকিগুলো প্যাকেটজাত করছি।

সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, রমজানে কক্সবাজারে পর্যটক ছিল না বলেই চলে। এ সুযোগে লাইফ গার্ড কর্মীরা দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেদের ট্রেনিং কার্যক্রমও চালিয়েছে। এখন ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের সেবা দিতে সবাই প্রস্তুত।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ঈদের ছুটিতে ৭ থেকে ৮ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হোটেল–মোটল, রেস্তোরাঁ এবং যানবাহনে যাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় না করা হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১৩টি খাতে অন্তত সাড়ে ৭ শত কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো: সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন, পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চুরি-ছিনতাই রোধে শহরের অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি যানজটের নিরসন এবং পর্যটকের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে প্রস্তুত পুলিশ।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজার পর্যটকের ভ্রমন সব সময় নিরাপদ করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ঈদে অতিরিক্ত পর্যটক আসবে। তাদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ টহল জোরদার, সাদা পোষাকে নজরধারী। বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স স্থাপন সহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যটকরা নিরাপদে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া আদায় এবং রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম যেন বাড়ানো না হয়, সেসব তদারকির জন্য একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হবে। পর্যটক হয়রানি এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

banner close
banner close