
রাজশাহীর বাঘায় বিএনপি নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় বাঘা উপজেলা সদরে অবস্থিত জাগ্রত বাঘা কার্যালয়ে এসব ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী। এর আগে রোববার (৩০ মার্চ) বিকেলে বাউসা ইউনিয়নের দীঘা ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি সৌরভ হোসেনের ওপর অতর্কিত হামলা করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ভিজিএফ, ভিজিডি ও ভিজিবি কার্ড বিতরণে অনিয়ম এবং চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। এ সময় নগদ দেড় লাখ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ দামি জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। ভাঙচুর করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র। এ ঘটনায় এলাকায় এখন উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নেতারা অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন নেতারা।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাঘা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইউনুস আলী বলেন, বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন সেবাগ্রহীতারা ইউনিয়ন পরিষদের কর্তা ব্যক্তিদের দ্বারা অন্যায়, দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হয়ে আসছিলেন। আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এই ঘটনার নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ করে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় ইউনিয়ন পরিষদের অন্যায় ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বাউসা ইউনিয়ন শাখা মানববন্ধনের আয়োজন করে। কিন্তু জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা করে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন জামায়াত নেতারা। পরে ২৩ মার্চ বাঘা থানার ওসির মধ্যস্থতায় ওই ঘটনার মীমাংসা করা হয়।
তিনি বলেন, এরপর কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই রোববার (৩০ মার্চ) বিকেলে বাউসা ইউনিয়নের দীঘা ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি সৌরভ হোসেনের ওপর অতর্কিত হামলা করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। আড়ানী থেকে বাড়িতে ফেরার পথে তার ওপর এই হামলা করে তারা। বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমের ভাতিজা আরাফাতর নেতৃত্বে রতন, মুমিন রাজীব, আকাশ প্রমুখ এ হামলা করেন।
তিনি আরও বলেন, এরপর একই দিন সন্ধ্যায় আহত সৌরভের সহকর্মী ছাত্রশিবির কর্মী মারুফ, মুন্না ও ফয়সালকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে যখম করে ওই হামলাকারীরা। এ সময় তাদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারী ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া তারা বাউসা বাজারে অবস্থিত জামায়াত সমর্থিত বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর এবং নগদ অর্থ লুটপাট করে। এর মধ্যে বাউসা বাজারের ব্যবসায়ী টুটুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আহত ছাত্রশিবিরকর্মী ফয়সাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাউসা ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মিজানুর রহমান শিল্পীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে তার বাড়ি থেকে আনুমানিক দুই লাখ টাকার বাদাম লুট করে নিয়ে গেছে। ছাত্রশিবির কর্মী রোহানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে তার বাড়ি থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা এবং দুটি বাইসাইকেল লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। একই সময়ে ছাত্রশিবির কর্মী রোহানের বাবার বাউসা বাজারে অবস্থিত স-মিলে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া ঈদের নামাজের পরে ইউনিয়ন যুবদলের নেতা এনামুলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সশস্ত্র অবস্থান নেন। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় এখন উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলেও জানান জামায়াত নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে এ হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা; ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চক্রান্ত বন্ধ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বাউসা ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জামায়াতের লোকজনই আমার ছাত্রদল নেতা রাজিবের ওপর হামলা চালিয়েছে। যার ফলে ছেলেটি গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে তিনি বাড়ি ও দোকান ভাঙচুরের দায় স্বীকার করেননি।
বাঘা থানার ওসি আ ফ ম আছাদুজ্জামান কালবেলাকে জানান, বাঘা থানাধীন বাউসা ইউনিয়নের মারামারি ঘটনায় এর আগে মীমাংসা হয়ে আবার নতুনভাবে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সঠিক তদন্তসাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেব।
আরও পড়ুন: