
কুষ্টিয়া শহরে ধর্ষণের শিকার ১৩ বছর বয়সী একশিশু একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নবজাতক পুত্র সন্তান জন্ম দেয় শিশুটি। এ ঘটনায় ধর্ষক উদয় কর্মকারকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কুষ্টিয়া জেল কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার সহযোগিতায় এ ঘটনা সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ মামলার আসামি ধর্ষক উদয় কর্মকার বাদীর আপন ভাই এবং ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী শিশুর আপন চাচা। তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাসিন্দা। তারা কুষ্টিয়া শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা ধর্ষণের শিকার ওই শিশু। এরপর ওইদিনই একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাদী মামলার এজহারে উল্লেখ করেছেন যে, আসামী শ্রী উদয় কর্মকার (২৬) সম্পর্কে আমার আপন ছোট ভাই। অনুমান ১০ মাস পূর্বে আমি আমার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধা মা ও আসামীকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করাকালীন ২০২৪ সালের ২ মে রাত্র অনুমান দেড়টার সময় আমার পরিবারের সকলে ঘুমিয়ে পড়লে আসামী ওই ভাড়া বাসায় আমার কন্যার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে আমার নাবালিকা কন্যার মুখ চেপে ধরে ঘরের ফ্লোরে শোয়াইয়া বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষন করে। পরবর্তীতে ০৩ মাস অতিবাহিত হলে উক্ত বাসা ছেড়ে দেই এবং বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করছি। ৭ এপ্রিল দুপুর অনুমান আড়াইটার দিকে আমার নাবালিকা কন্যা (১৩) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার কন্যাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করে। তখন আমার নাবালিকা কন্যাকে জিজ্ঞাসা করলে সে তার মায়ের নিকটে জানায় যে, উপরোক্ত আসামী বর্নিত তারিখ সহ বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে পূর্বের ভাড়া বাসায় অবস্থানকালে আমার নাবালিকা কন্যার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে একাধিকবার জোর পূর্বক ধর্ষণ করেছে। আসামীর ভয়ে আমার নাবালিকা কন্যা কাউকে কিছু বলেনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা বলেন, আসামি আপন ভাইয়ের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দী রয়েছে। তবে বিষয়টি সমঝোতার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এ মামলায় পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা সমঝোতায় সহযোগিতা করছেন। এর জন্য টাকাও নিয়েছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত ও আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নার্গিস খাতুন বলেন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী মেয়েটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছে। পরেরদিন এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওইদিনই মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডিএনএ টেস্ট করা হবে। ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার পর জবানবন্দি ও রিমান্ডের আবেদন করা হবে। সমঝোতায় সহযোগিতা ও টাকা নেয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। \
এ মামলার বাদী ও ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বলেন, এটা একটা পারিবারিক ব্যাপার। আমরা মিলচাল করে নিচ্চি। নিজেদের ব্যাপার এজন্য পুলিশের মাধ্যমে মিলচাল করে নিচ্ছি। মিলচালের ব্যাপারে পুলিশ সহযোগিতা করছে। এটা নিয়ে বেশিকিছু বলতে চাচ্ছি না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স জেসমিন পারভিন বলেন, ৮ এপ্রিল বেলা ১২টা ১০ মিনিটের দিকে হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি হন। এরপর দুপুর একটা ১০ মিনিটের দিকে নরমাল ডেলিভারিতে পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। এরপর আনুমানিক বিকালের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তারা চলে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ হোসেন ইমাম বলেন, প্রথমে সবকিছু গোপন করে ধর্ষণের শিকার ওই শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরপর নরমাল ডেলিভারিতে পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। ওইদিনই হাসপাতাল থেকে তারা পালিয়ে যায়। এরপর এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে ওইদিনই তাকে গাইনী বিভাগে ভর্তি হয়। বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান তারা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাকে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্ট করা হবে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: