শনিবার

১৯ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২১ শাওয়াল, ১৪৪৬

সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দুদকের অভিযান, নৈশপ্রহরীর পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার

প্রতিনিধি,কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১৯:৫২

শেয়ার

সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দুদকের অভিযান, নৈশপ্রহরীর পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার
ছবি: বাংলা এডিশন
কুষ্টিয়ার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি ও নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসময় প্রাথমিকভাবে অনিয়ম দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও নৈশপ্রহরীর পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। 
 
বুধবার দুপুরের দিকে দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করেন। কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বুলবুল আহমেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। 
 
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে খোকসা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। এসময় দুদকের টিম তল্লাশি করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরী হারুনার রশিদ হারুনের পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে। হারুন উক্ত টাকার উৎস সম্পর্কে দাবি করেছেন যে, টাকাগুলো তার ব্যক্তিগত ব্যবসা করার টাকা। তার কাছে টাকার উৎসের প্রমাণ চেয়েছে দুদক।
 
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, খোকসা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে কিছু অনিয়ম দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।  আমরা অফিসের নাইট গার্ডের কাছে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। উনি ব্যক্তিগত ব্যবসার টাকা বলে দাবি করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে। 
 
তিনি আরও বলেন, খোকসার সাব রেজিস্ট্রার সপ্তাহে একদিন ডিউটি করেন। সেবাগ্রহীতাদের কাছে থেকে এই অফিসের স্টাফরা যে ফি আদায় করেন, সেগুলো দৈনন্দিন রেকর্ড করা হয় না। কিছুদিন পরে সেগুলো রেকর্ড করা হয়। উনাদের নির্দেশনা দিয়েছি যে, যখন টাকা কালেকশন করবেন তখনই রেকর্ড করবেন এবং চালানটা জমা দিবেন। আমরা রেজিস্ট্রারের ফটোকপি চেয়েছি, রেকর্ডপত্র চেয়েছি। পরবর্তীতে আমরা কমিশন বরাবর রিপোর্ট দাখিল করবো। 
 
কুষ্টিয়ার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এই অফিসটি ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। দীর্ঘদিন ধরে দলিল লেখক, তাদের লোকজন, স্ট্যাম্প ভেন্ডারের মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী বেশকিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি চক্র রমরমা ঘুষ বাণিজ্য করে আসছে। ঘুষের টাকার ভাগ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পকেটে চলে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। 
 
আরও অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রতি দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। নামের ভুল থাকলে ঘুষ দিতে হয়। দলিলের দাম বেশি নেওয়া হয়। এভাবে প্রতিটি সেবার জন্য পদে পদে ঘুষ আদায় করা হয়। 
 
এবিষয়ে খোকসা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরী হারুনার রশিদ হারুন বলেন, আমি অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত না। আমার পকেটে ব্যক্তিগত ব্যবসার ৪০ হাজার টাকা ছিল। সেটা দুদক উদ্ধার করেছে। সেই টাকা ঘুষের টাকা না। 
 
আপনি নৈশপ্রহরী, দিনের বেলায় অফিস করেন কেন?  এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গরীব মানু দিনের বেলায় অফিসে এসে কামকাজ করি। মুহুরি দলিল লেখকরা কিছু টাকাপয়সা দেন। বাড়তি কিছু টাকা পায় এজন্যই দিনের বেলায় অফিস করি।
 
সাব-রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিক কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত। খোকসা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে সপ্তাহে একদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। 
 
অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে খোকসার সাব-রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিক বলেন, অফিসের বাইরে কি হয়, বাইরে কে কি নেন, সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। তবে অফিস ও অফিসের স্টাফ সরকারি ফিসের বাইরে একটি টাকাও নেওয়া হয় না। যেটাকাটা নেওয়া হয়, সেই টাকার রশিদও প্রদান করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অভিযোগ পরিচালনা করেছেন। আমি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছি। উনারা রেজিস্ট্রারের রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই করেছেন। কি অনিয়ম দুর্নীতি পেয়েছেন, সেটা উনারাই বলতে পারবেন। আমি উনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। 
 
 
banner close
banner close