শনিবার

১৯ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২১ শাওয়াল, ১৪৪৬

বিদ্যালয়ে ঝুলছে তালা, ক্লাশে ঢুকতে শিক্ষার্থীদের দির্ঘ সময় অপেক্ষা

প্রতিনিধি,ভোলা

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১৬:৫৪

শেয়ার

বিদ্যালয়ে ঝুলছে তালা, ক্লাশে ঢুকতে শিক্ষার্থীদের দির্ঘ সময়  অপেক্ষা
ছবি : বাংলা এডিশন
সকাল ৯ টার পরিবর্তে সাড়ে দশটায় খোলা হচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। দির্ঘ সময় ধরে কোমলমতি শিশুরা অপেক্ষা করছে শ্রেণি কক্ষে ঢুকার জন্য। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০ টা বেজে ০৫ মিনিট। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে প্রধান ফটকে অপেক্ষারত   শিশু শিক্ষার্থীরা।
 
সকাল ১০:১০ মিনিটে বিদ্যালয়ে আসেন সহকারী শিক্ষিকা শাহিদা বেগম, তিনি এসে তালা খুলে দিলে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। তার কিছু সময় পরে সহকারী শিক্ষিকা তাসলিমা বেগম এসে ১০:১২ মিনিটে জাতীয়  পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ে।  তখনও আসেননি প্রধান  শিক্ষক রোকসানা বেগম।শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের জন্য অপেক্ষা করছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। 
 
বিদ্যালয়ে সাংবাদিক আসার খবরে প্রধান  শিক্ষক রোকসানা এসে পৌঁছান সকাল সাড়ে ১০টারও পরে। অথচ সরকারি নিয়মানুযায়ী সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের মধ্যে বিদ্যালয়ে সব শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত থাকার কথা। বৃহস্পতিবার  ভোলা সদর উপজেলার ৪১ নং কন্দ্রকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। তদারকির অভাবে বিদ্যালয়টিতে এমন অনিয়মের চিত্র নিত্যদিনের বলে জানান স্থানীয়রা।
 
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। দেড় শতাধিক ছাত্র ছাত্রীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৫জন, তার মধ্যে একজন শিক্ষক  মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক সহ বাকী চারজন শিক্ষকই নির্ধারিত সময় সূচীর এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় পরে বিদ্যালয়ে আসেন এবং ছুটি দিয়ে চলে যান নির্দিষ্ট সময়ের আগেই।  এতে বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।  বেশ কয়েক বছর ধরে  এভাবেই চলছে বিদ্যালয়টি।
 
অফিস কক্ষের তালা খোলার সময় সহকারী শিক্ষিকা সাহিদা বলেন আমাদের দপ্তরি নেই, তাই তালা খোলা পতাকা উত্তলন ও নামানো সহ ঘন্টা বাজানো আমাদেরই করতে হয়। 
সেজন্য তারা বাড়ি থেকে চাবি নিয়ে এসে তারা নিজেরাই বিদ্যালয়ের তালা খুলে ক্লাসে বসে। আজ আমাদের আসতে একটু দেড়ি হয়েগেছে বলেই তালা খুলতে দেড়ি হয়েছে। 
 
শিক্ষকদের অপেক্ষায় স্কুল গেটের বাহিরে  বসে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ছাত্র বলেন  তাদের স্কুলে মাত্র প্রতিদিনই এমন সময়ই ক্লাস শুরু হয়।
 
তবে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষিকারা বলেন, প্রতিদিন সাড়ে ৯টার মধ্যেই বিদ্যালয়ের তালা খোলেন। কিন্তু আজই  একটু বিশেষ  কারণে তার আসতে দেরি হয়েছে। 
 
এদিকে প্রধান শিক্ষক রোকসানা আসার আগে সহকারী শিক্ষিকা তাসলিমা বেগম ও শাহিদা বেগমের নিকট জানতে চাওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কে আছেন?  উত্তরে শাহিদা বেগম বলেন আমি নতুন এসেছি  ২০২৩ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি তবে ম্যানেজিং কমিটিতে কে বা কাহারা রয়েছে তা প্রধান শিক্ষকই জানেন, আমি জানিনা তবে প্রধান শিক্ষকের কাছে জিজ্ঞেস করে বলতে পারবো বলে তিনি সহকারী শিক্ষিকা শাহিদার নিকট জিজ্ঞেস করলেন তিনিও জানেন না ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কে। 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল একজন ব্যাবসায়ী বাসিন্দা বলেন, এই স্কুল খোলার ঠিক-ঠিকানা নেই। শিক্ষকরা  ১০টায়ও আসে তার পরেও আসে,তবে সাড়ে ৯টার আগে কেউ তেমন একটা আসতে দেখি না। দিনে দিনে স্কুলটার পাঠদান ও পরিচালনা  নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
 
তবে প্রধান শিক্ষক রোকসানা বলেন আমার বাসা ভোলা সদরে, এখান থেকে বেশ দুরে রাস্তায় যানজটের কারণে স্কুলে আসতে আজই একটু দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অসীম প্রসাদ বিশ্বাসকে একাধিকবার কল করলে কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পেশ করা সম্ভব হয়নি। তবে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু তাহের বলেন  সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের মধ্যেই বিদ্যালয় খুলতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে হবে। যদি এর কোনো ব্যত্যয় ঘটে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার অসীম প্রসাদ স্যার কে পূণরায়  অবগত করার অনুরোধ জানান তিনি। 
 
banner close
banner close