শনিবার

১৯ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২১ শাওয়াল, ১৪৪৬

সিলেটে বজ্রপাতে নিহত চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকদ্বয়ের দাফন নিজ গ্রামে সম্পন্ন: ইউএনওর অনুদান

প্রতিনিধি,চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১৭:৫৬

শেয়ার

সিলেটে বজ্রপাতে নিহত চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকদ্বয়ের দাফন নিজ গ্রামে সম্পন্ন: ইউএনওর অনুদান
ছবি : বাংলা এডিশন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কানসাট এলাকা থেকে সিলেটের হবিগঞ্জের শিবচরের হাওর এলাকায় ধান কাটা অবস্থায় বজ্রপাতে নিহত দুই কৃষকের দাফন কাজ নিজ এলাকায় বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে। 
গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবচরের হাওর এলাকায় ধান কাটা অবস্থায় বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু ঘটে। নিহত দুই কৃষকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের পার্বতীপুর ও মোহনবাগ এলাকায়। 
 
পার্বতীপুর গ্রামের নিহত কৃষক আব্দুল্লাহিল কাফী (২৩) পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তান আবুল কাশেম ও জঞ্জালী বেগম দম্পত্তির। চার বোনের একমাত্র ছোট ভাই ছিলো আব্দুল্লাহিল কাফি। জানা যায়, জঞ্জালী বেগম পাঁচ বছর পূর্বে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল হয়ে যান। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি। ফলে পরিবারের অবস্থা এতটাই ভঙ্গুর হয়ে যায় যা বর্ণণাতীত। পিতা আবুল কাসিমের পেশা ছিল গ্রামে গ্রামে ফেরি করে মাটির হাঁড়ি বিক্রি করে সংসার চালানো। এতে তার বড় চার মেয়েকে পাত্রস্থ করতে গিয়ে জীবনের সকল সঞ্চয় শেষ করে ফেলেন। ফলে তার একার পক্ষে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় বাবাকে সহযোগিতা করতেই এসএসসি পাশ করে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি আব্দুল্লাহিল কাফির। সে কারণে পড়ালেখার পাঠ শেষ করে সংসারের হাল ধরেন। সংসার ঠিক রাখতে গিয়ে বছর চারেক আগে বিয়েও দেওয়া হয় পারিবারিক ভাবে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় সংসারে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। প্রথম সন্তানের বয়স যখন সাতাশ মাস ঠিক সে সময় তাদের ঘর আলো করে আসে কন্যা সন্তান। এভাবেই তাদের সংসার হাসিখুশিতে ভরপুর থাকে। 
 
সারা বছরের জন্য খাদ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে ধান কাটতে যায় সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবচরে। শিবচরের হাওরে ধান কাটা অবস্থায় গতকাল বুধবার  দুপুর আড়াইটার দিকে বজ্রপাতে আব্দুল্লাহিল কাফি মৃত্যুবরণ করেন।
 
অপর আরেক নিহত মোহনবাগ গ্রামের মোঃ মনিরুল ইসলামের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার বসবাস করতেন। জীবিকার তাগিদে তিনিও ধান কাটতে সিলেটে যান এবং বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। 
 
এদিকে সিলেট থেকে মৃতদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স সকালে সাড়ে আটটার সময় এলাকায় পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হাজারো মানুষের ঢল নামে মৃতদের এক নজর দেখার জন্য। ঘটনা শুনে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাঃ আজাহার আলী শোকাহত পারিবারের সাথে দেখা করে ২৫ হাজার টাকা করে দুই পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। তিনি উক্ত পরিবারদ্বয়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
banner close
banner close