
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও আনলোড করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর কালিতলা পশ্চিম কুশিয়ারচর গ্রামে পদ্মাপাড়ে বালু আনলোডার মেশিনে আগুন ও আনলোডের পাইপ ভাংচুর করে উৎসুক এলাকাবাসী।বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর কালিতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরেই কুশিয়ারচর কালিতলা এলাকায় নদীর তীরবর্তী স্থান থেকে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি মহল। সেই বালু কুশিয়ারচর গ্রামে পদ্মাপাড়ে আনলোডার দিয়ে আনলোড করা হচ্ছে। এতে করে সদ্য নদী শাসনের কাজে ব্যবহৃত জিও ব্যাগগুলো নষ্ট হচ্ছে। বার বার নিষেধ করা হলেও বালু উত্তোলন কিংবা বালু আনলোড বন্ধ হচ্ছে না। রাতে এলাকার মানুষ ঘুমাতে পারে না। আবার মানুষের মনে নদী ভাঙ্গনের আতংক দেখা দিয়েছে। প্রায় মাস দুয়েক আগে উপজেলা প্রশাসনসহ সেনা ক্যাম্পেও বিষয়টি স্থানীয়রা অবহিত করেন। এতে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বন্ধ করে দিয়ে যায়। এ ঘটনার পর কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও পুনরায় বালু উত্তোলন ও আনলোড শুরু হয়। অবশেষে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী আনলোডার মেশিনে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পাইপ ভাংচুর করে বলে এলাকাবাসী দাবি করেন।
সরেজমিনে গেলে কুশিয়ারচর গ্রামের আব্দুল লতিফের স্ত্রী জিহারন বেগম জানান, নদী ভাঙনরোধে আমাদের এখানে কিছুদিন আগে জিও ব্যাগ ফেলেছে। এই খানেই রাতের আঁধারে নদীর পাড় ঘেঁষে কাটার ( মাটি খনন যন্ত্র) দিয়ে বালু উত্তোলন করে এখানে আনলোড করছে। এতে করে আমাদের এলাকার মানুষ নদী ভাঙন আতংকে পড়েছে। এখানে আনলোড বসিয়েছে ঝিটকার সোহেল। বার বার না করা সত্বেও ফিরছে না।
একই গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী মমতা আক্তার জানান, আমাদের বড় সমস্যা এখানে নদীতে ভাঙে। নদী ভাঙ্গার জন্য সরকার এখানে বস্তা ফালাইছে। এখান থেকে বালি কেটে শিবালয় নিয়ে যাচ্ছে। এই খানের আনলোডটা অনেকবার সরাতে বলা হয়েছে। কিন্তু সরায় নাই। এখানে মা বোনেরা গোসল করে। তাদের সমস্যা হয়। এখানে যদি আবার ভাঙে তাইলে আমরা কই যামু?
রবিউল গায়ানের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন জানান, আমাদের বাড়ি একেবারে নদীর পাড়ে। আমাদের বাড়ি যাতে না ভাঙ্গে সেই জন্য সরকার এখানে বস্তা ফেলছে। যে জায়গায় ড্রেজার বসাইছে ওই জায়গা থেকেই মাটি কাটে। আবার যদি ভাঙ্গন শুরু হয়, তাহলে আমরা কই যামু। যেভাবে বাঁশের খুটি দিয়ে পাইপ বসিয়েছে এতে মানুষ চলাফেরা করতে পারে না।
সালমা বেগম জানান, একদিকে নদী ভাঙ্গতেছে, অন্য দিকে বাড়ির কাছ থেকে মাটি কাটতেছে। আমরা কতবার বলছি যে, এই খান থেকে মাটি কাটা যাইব না। আমরা নদীর পাড়ে আছি। আমাগো তো আর জায়গা বাসা নাই। গরীব মানুষ আমরা। বার বার না করার পরে ফিরে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ভাইংগা দিছি।
ওহাব আলী জানান, আমরা নদী সিকস্ত মানুষ। নদীর পাড়েই আমাগো বাড়ি। এই জায়গাটুকু ভাইঙ্গা গেলে আমাগো আর জায়গা নাই। আমরা কই যামু। আগে চরে থেকে মাটি কাটতো। ইদানিং রাতে গোপনে নদীর পাড়ের কাছ থেকে কাটা শুরু হইছে। এই জায়গাটুকু যদি ভাইঙ্গা যায়। তাহলে আমরা কই যামু?? আমাগো দাবি, যাতে ড্রেজারগুলো চইলা যায়। এখানে কিছু দিন আগে নতুন বস্তাগুলো ফালাইছে। এগুলো যদি না থাকে তাহলে তো আমাগো বাড়িঘরও থাকবো না। তাই প্রশাসনের কাছে আমাগো দাবি, যাতে ড্রেজারগুলো এখানে না থাকে।
তবে বালু ব্যবসায়ী সোহেল শিকদার জানান, আমি বালু মহালের ইজারাদারের কাছ থেকে বালু কিনে আনলোড করি। আনলোডে সমস্যা হলে আমাকে জানালে আমি সরিয়ে নিতাম। আমাকে ওই এলাকা থেকে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি। ওখানকার একটা কুচক্রমহল দীর্ঘদিন ধরেই আমার কাছে চাঁদার দাবি করছে। চাঁদার টাকা না পেয়েই তারা আমার ৩০ লক্ষ টাকার পাইপ ভাঙ্গছে। আনলোডের মালিকসহ স্টাফদের মারধর করছে। গতকাল তাদের আমি ৬৭ হাজার টাকা দিয়েছি। সে টাকা নিয়ে গেছে। তাদের রান্না করা ভাত তরকারি পর্যন্ত ফেলে দিয়েছে। আনলোডের মেশিনসহ তাদের কাপড়চোপড় পুড়িয়ে ফেলছে। আমি তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনের কাছে এর বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার জানান, পহেলা বৈশাখের পর থেকে আমাদের কোনো বালু মহাল নেই। যদি এখন অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: