শনিবার

১৯ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

মানিকগঞ্জে বালু ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, এলাকারবাসীর ওপর হামলার অভিযোগ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১৬:১৪

শেয়ার

মানিকগঞ্জে বালু ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, এলাকারবাসীর ওপর হামলার অভিযোগ
ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর সীমানায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও আনলোডে বাঁধা দেয়ার জেরে স্থানীয় নারী পুরুষের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নারী পুরুষসহ তিনজন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন কুশিয়ারচর গ্রামের আলমগীরের স্ত্রী মমতা বেগম, একই গ্রামের বারেক গায়ানের ছেলে রবিউল গায়ান ও গোবিন্দ দাসের ছেলে গোকুল দাস। তবে হামলার ঘটনায় বালু ব্যবসায়ীর সহযোগীদের বিরুদ্ধে আহত মমতা বেগমের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল উঠিয়ে দেয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনায় থানা পুলিশকে অবহিত করলে বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরেই কুশিয়ারচর কালিতলা এলাকায় নদীর তীরবর্তী স্থান থেকে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি মহল। সেই বালু কুশিয়ারচর গ্রামে পদ্মাপাড়ে আনলোডার মেশিন দিয়ে আনলোড করার কারণে ভাঙনরোধে ফেলা জিও ব্যাগগুলো নষ্ট হচ্ছে। এতে করে নদী ভাঙ্গনের আতংকে দিনপার করছেন ওই গ্রামের পদ্মাপাড়ের শতশত পরিবার । অবৈধ ড্রেজার বন্ধে দুই-তিন মাস আগে মানিকগঞ্জ সেনা ক্যাম্পে বিষয়টি স্থানীয়রা জানালে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বন্ধ করে দিয়ে যায়। এ ঘটনায় কয়েকদিন বন্ধ থাকার পরে পুনরায় বালু উত্তোলন ও আনলোড শুরু হয়।

এলাকাবাসী দাবি করেন, সম্প্রতি ছোট ড্রেজার দিয়ে নদী পাড়ের ১০০ মিটারের মধ্যে বালু কেটে আনলোড শুরু করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ উপজেলা যুবদল কর্মী সোহেল শিকদার ও তার লোকজন রাতে বালু উত্তোলন করে পাশেই তার গদিতে ফেলছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বালু আনলোডের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আনলোড মেশিনে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পাইপ ভাংচুর করে। এ ঘটনার জেরে ওই বালুর গদির মালিক সোহেল শিকদারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত স্থানীয় ফোকন গায়ানের ছেলে সাইদুর গায়ানসহ সোহেলের লোকজন মোটরসাইকেল নিয়ে এসে স্থানীয়দের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ ঘটনায় আলমগীরের স্ত্রী মমতার ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল উঠিয়ে দেয় বালুর গদি মালিকের লোকজন।

স্থানীয়রা আরও জানায়, এলাকায় তিনটি গদিই সাইদুরের আত্মীয় স্বজনদের। সাইদুরের কারণেই এই অবৈধ বালু উত্তোলন।  

এ বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী যুবদল নেতা সোহেল শিকদার জানান, ‘বালু উত্তোলনে আমার কোনো ড্রেজার নাই। আমি বালু মহালের ইজারাদারের কাছ থেকে বালু কিনে আনলোড করি। একটি চক্র আমার কাছে চাঁদার দাবি করে আসছিল। চাঁদা না পেয়ে ৩০ লাখ টাকার পাইপ ভাংচুর করেছে। আমার আনলোডে আগুন দিয়েছে। আমার আনলোডের মালিকের কাছ থেকে ৬৭ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন।’

হরিরামপুর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আবু সাদাত শাহিন বলেন, ‘যুবদলের কেউ যদি অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ মেনে নেয়া হবে না। অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ ঘটনায় হরিরামপুর থানার ওসি মুহাম্মদ মুমিন খান বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। ফৌজদারি অপরাধে কেউ অভিযোগ দিলে আাইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ থেকে সরকারের কোনো বালু মহাল ইজারা দেয়া নেই। যদি এখন অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

banner close
banner close