রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৭ বৈশাখ, ১৪৩২
২৩ শাওয়াল, ১৪৪৬

জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সংকটে কুতুবদিয়া-মহেশখালীর মানুষ,সি-অ্যাম্বুলেন্স চালুর দাবি

প্রতিনিধি,কক্সবাজার

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল, ২০২৫ ১৫:৪৪

শেয়ার

জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সংকটে কুতুবদিয়া-মহেশখালীর মানুষ,সি-অ্যাম্বুলেন্স চালুর দাবি
ছবি : বাংলা এডিশন
চলন্ত স্পিডবোটেই উঠে প্রসব বেদনা, আর মাঝসমুদ্রে জন্ম নেয় এক নবজাতক। ঘটনাটি শুনে অনেকেই বিস্মিত হলেও, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর মানুষের কাছে এটি যেন স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিদিনই সাধারণ যাত্রীবাহী বোটে পারাপার করা হচ্ছে গুরুতর অসুস্থ রোগী, প্রসূতি নারীসহ নানা সংকটাপন্ন যাত্রী।
 
স্বাস্থ্যসেবার জন্য দ্বীপবাসীর এই দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। জরুরি চিকিৎসা নিতে কক্সবাজার কিংবা চট্টগ্রাম যেতে হয়, অথচ দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে যাওয়ার জন্য নেই কোনো সী অ্যাম্বুলেন্স বা নিয়মিত ফেরি সার্ভিস।একজন অসুস্থ ব্যক্তির জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পাড়ি দিতে হয় সমুদ্র। অসুস্থ রোগী কিংবা প্রসূতি নারী সবাইকে যেতে হয় ভাগ্যের উপর ভরসা করে। তাৎক্ষণিক রোগী আনার জন্য স্পীডবোট রিজার্ভ করতেও গুণতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
 
কক্সবাজারের ৬ নং ঘাটের কর্মী মো হোসাইন বলেন, মহেশখালী কুতুবদিয়া দীপাঞ্চল। কারো বড় ধরনের কোন এক্সিডেন্ট বা সমস্যা হলে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেক ডেলিভারি রোগীর আমাদের সামনে ঘাটের মধ্যেই, বোটের মধ্যে বাচ্চা হয়ে গিয়েছে।
 
কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, আমাদের মহেশখালী কুতুবদিয়াবাসীর অনেক অসুবিধা হয়। রাতে হঠাৎ অসুস্থ হলে কিছুই করার থাকে না। মাঝে মধ্যে স্পিডবোট পাওয়া যায় না। এভাবেই চলছে প্রতিদিন। রাতে মুমূর্ষু রোগী বা আশংকাজনক রোগি হলে তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।
 
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি  বলেন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। অথচ কুতুবদিয়া- মহেশখালীর প্রায় ৪ লাখ মানুষের সাথে এ কেমন বৈষম্য? কক্সবাজার শহর থেকে এ দ্বীপে যেতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথ। আমি যখন পরিবার নিয়ে মহেশখালী শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাই তখন আমার মনে একটা আতঙ্ক থাকে যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি! তাও যদি হয় রাতে, তাহলে কীভাবে আবার কক্সবাজার পার হবো। বড় ধরনের কোনো দূর্ঘটনা হলে ওদের নিয়ে নিরাপদে পার হওয়ার সুযোগ আমি দেখিনি। তাই আমি সবসময় প্রার্থনা করি যেন মহেশখালী গেলে বড় ধরণের কোনো বিপদ-আপদ না হয় বা ঝুঁকিপূর্ণ কোন ঘটনা যেন না ঘটে। তাই আমি অল্প একটু অসুস্থ বোধ করলেই আবার পরিবারকে নিয়ে কক্সবাজারে চলে আসি। যদিও সী-ট্রাক চালু হয়েছে। এখন অবিলম্বে মহেশখালী-কুতুবদিয়া নৌরুটে সী অ্যাম্বুলেন্স ও নিয়মিত ফেরি সার্ভিস চালু করতে হবে।
 
সম্প্রতি কক্সবাজারের ৬ নম্বর ঘাটে এমন একটি ঘটনা সবার চোখে পড়ে এক নারী স্পিডবোটে করে পৌঁছার পরপরই ঘাটেই সন্তান প্রসব করেন। উপস্থিত লোকজন কাপড় দিয়ে চারপাশ ঘিরে কোনোমতে প্রসব কাজ সম্পন্ন করেন। এ ঘটনা সচেতন মহলের পাশাপাশি চিকিৎসকদের মাঝেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
 
মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈকত বড়ুয়া মুন্না বলেন, এখানে রোগীদের যাতায়াত আর সাধারণ মানুষের যাতায়াত কখনও এক হবে না। সেক্ষেত্রে রোগীদের পারপার করার জন্য এখানে অবশ্যই ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স বা সি-অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন। সী এম্বুলেন্স হলেও তা যথেষ্ট নয় বরং সেটি ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ মানুষ প্রয়োজন। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় রাতে। রাতে কোনো নৌযান চলে না। জরুরী রোগী পারাপারের জন্য এখানে সার্বক্ষণিক সি-অ্যাম্বুলেন্স থাকা প্রয়োজন।
 
দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন আগে স্বল্প সময়ের জন্য চালু করা হয়েছিল একটি  সি-অ্যাম্বুলেন্স, তবে সেটিও বর্তমানে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কেন বন্ধ হয়েছে, সেটিও জানেন না তারা।মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্লাহ জানান, সি-অ্যাম্বুলেন্স এক সময় চালু ছিল, কিন্তু এখন তা আর সচল নেই।
 
কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.রেজাউল হাসান বাংলা এডিশন কে বলেন, বর্তমানে আমাদের মোট পাঁচজন মেডিকেল অফিসার ও ৬ জন নার্স কর্মরত। তীব্র জনবল সংকটের কারণে আমাদের ইমারজেন্সি ইনডোর আউটডোর স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সি-অ্যাম্বুলেন্স আমরা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) থেকে পেয়েছিলাম। এই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা নিজেদের অর্থায়নে তত্ত্বাবধান করছি। ফুয়েল এর অভাবে এটি পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি এ প্রকল্পটি আবার চালু করা হয়, সি-অ্যাম্বুলেন্স আমরা আবার চালু করতে পারব।
 
তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো, সম্প্রতি কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে সী-ট্রাক। এতে যাত্রীদের যাতায়াতে সাময়িক স্বস্তি এলেও, স্বাস্থ্যসেবার গুরুতর সংকট মোকাবেলায় এটি যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
banner close
banner close