রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৭ বৈশাখ, ১৪৩২
২৩ শাওয়াল, ১৪৪৬

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে বাজে মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে যখম

প্রতিনিধি,চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:১০

শেয়ার

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে বাজে মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে যখম
ছবি : বাংলা এডিশন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের ঝাবু বাজারে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করেছে স্থানীয় এক সন্ত্রাসী।

ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার  সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার অর্থগত আজমেরিগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা হাওড় এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু বরণ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলাধীন কানসাট ইউনিয়নের পার্বতীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহিল কাফি (২২)। তাকে ১৭ এপ্রিল দাফন করা হয়। বজ্রাঘাতে আব্দুল্লাহিল কাফির শরীর কালচে বর্ণ ধারণ করে। এই ঘটনাটিকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের রফিক আলী জুম'য়ার নামাজের পরে স্থানীয় মুসল্লিদের জানান, "আব্দুল্লাহিল কাফি ছেলেটা বেয়াদব ছিলো। সেজন্য তার উপর আল্লাহর গজব পড়ে শরীর কালো হয়ে গেছে। তার সাথে যারা চলাফেরা করতে তারা সাবধান হয়ে যাও।" এমন কথায় উপস্থিত মুসল্লীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। উক্ত বিষয়টি মৃত আব্দুল্লাহিল কাফির বাবাকে জানানো হলে তিনি পরদিন শনিবার সন্ধ্যার সময় ঝাবু বাজারে রফিক আলীর কাছে মৃত ছেলের অজ্ঞতাবশত ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে গেলে রফিক আলী উচ্চবাচ্য শুরু করে বলেন তিনি এসব কথা বলেননি। তখন স্থানীয় বেশকিছু ব্যক্তি ও রবিউল ইসলাম তাকে বলেন যে, আপনি গতকাল মসজিদে আব্দুল্লাহিল কাফির বিষয়ে অনেক বাজে কথা বলেছেন। এই কথাতে ক্ষিপ্ত হয়ে রবিউল ইসলামের উপর চড়াও হয় রফিক আলী, ফটিক আলী ও রফিকের ছেলে মোহাম্মদ আলী। বাজারে উপস্থিত লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। কিন্তু এর ১০ মিনিট পরে হটাৎ করে মোহাম্মদ আলী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা রবিউল ইসলামের ডান দিকের গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। অতর্কিত হামলায় রবিউল ইসলাম বাম হাত দিয়ে অস্ত্রটি ধরে ফেলার চেষ্টা করলে তার হাতের অনেক অংশ কেটে যায়। এরপর মোহাম্মদ আলী আবারো রবিউল ইসলামের পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করলে রবিউল ইসলামের গলা ও পেট কেটে যায়। এতে রবিউল ইসলামের শরীর ও কাপড় রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলে তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয়রা। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বর্তমানে রবিউল ইসলাম রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জানা গেছে, তিনি এখন আশংকামুক্ত। তবে তার বাম হাত নষ্ট হওয়ার শংকা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রফিক আলী ও তার সন্তান মোহাম্মদ আলী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। রফিক আলীর মূল পেশা হলো দালালী করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া। এলাকায় তার এসব অপকর্মের সাথে বেশকিছু ব্যক্তি জড়িত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভুক্তভোগী বলেন, যেকোন গ্রাম্য শালীসে তারা ন্যায় বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় তার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। এছাড়া থানায় তদবিরের নামেও হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।

তার ব্যাপারে আরও জানা গেছে, রফিক আলী ২টি হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। এছাড়া আরও বেশকিছু মামলার তিনি আসামি। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, বাপ-ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তদের অত্যাচারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। আমরা এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে স্থায়ী মুক্তি চায়।

জানা গেছে, আহত রবিউল ইসলামের ছোট ভাই বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়েরও করেছেন। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া বাংলা এডিশন কে জানান, গতকালকের ঘটনায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। মামলার অন্যতম আসামি মোহাঃ রফিক আলীকে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গ্রেফতার করেছে। মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মোহাম্মদ আলী ও অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

banner close
banner close