শুক্রবার

২৫ এপ্রিল, ২০২৫
১১ বৈশাখ, ১৪৩২
২৭ শাওয়াল, ১৪৪৬

বিপদে গর্ভবতী নারী ও শিশু, মোহনগঞ্জের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেন ছন্নছাড়া

প্রতিনিধি,কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:৩১

শেয়ার

বিপদে গর্ভবতী নারী ও শিশু, মোহনগঞ্জের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেন ছন্নছাড়া
ছবি : বাংলা এডিশন
মোহনগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এক যুগ আগেও এটি ছিল উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের করালগ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ বসতবাড়ি, ফসলি জমি এবং সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান। এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ পরিবার।
 
দুই বছর আগে নদীর বাম তীর রক্ষায় কাজ শুরু হয়। এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫১২ কোটি টাকা। কাজ সম্পন্ন হওয়ায় নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে এই ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
 
তবে এত কিছু সত্ত্বেও মোহনগঞ্জে এখনো নেই কোনো হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এতে করে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, একসময় মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়ারচর বাজারে একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে সেটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেলেও সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়নি।
 
রাজীবপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সোহাগ বলেন, “আমরা বরাবরই অবহেলিত। উপজেলা শহরে যেতেও অনেক কষ্ট হয়। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। কোনো গুরুতর রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হলে পারি না। রাজীবপুর অথবা জামালপুরে নিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় তাও সম্ভব হয় না।”
 
স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহমেদ বলেন, “প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মোহনগঞ্জবাসীকে যেতে হয় প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে রাস্তা খারাপ থাকায় এই দূরত্ব ঘুরে গিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটারে দাঁড়ায়। যোগাযোগব্যবস্থার দুরবস্থা, ভাঙাচোরা রাস্তা ও যানবাহনের সংকটের কারণে এই পথযাত্রা অত্যন্ত দুর্বিষহ।”
 
অন্য এক বাসিন্দা আকলিমা খাতুন বলেন, “আগে আমাদের এখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল, সেখান থেকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ ও পরামর্শ পেতাম। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানোর কাজ হতো। কিন্তু নদীতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বিলীন হওয়ার পর আমরা সে সুযোগ হারিয়েছি।”
 
তিনি আরও বলেন, “গর্ভবতী নারী, শিশু ও জরুরি রোগীদের নিয়ে রাজীবপুর বা জামালপুর যাওয়ার রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা ও বিপজ্জনক। অনেক সময় সময়মতো পৌঁছানো যায় না, ফলে জটিলতা দেখা দেয়।”
 
মোহনগঞ্জে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুনঃস্থাপনের দাবিতে স্থানীয় নাফিউল আজম জুয়েল বাংলা এডিশন কে বলেন, “আমরা বারবার আবেদন করলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। চরাঞ্চল হওয়ায় ও দুর্গম পরিবেশের কারণে মোহনগঞ্জ অবহেলার শিকার। একসময় আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকতেন, পর্যাপ্ত ওষুধ থাকত। এতে চিকিৎসা ব্যয় অনেকটা কমে আসত। কিন্তু এখন প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”
 
তিনি আরও বলেন, “দ্রুত মোহনগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিস্থাপন করতে হবে। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমবে এবং দুর্ভোগ লাঘব হবে।”
 
এ বিষয়ে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সারওয়ার জাহান  বলেন, “আমি ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারা কেউ জমি দিতে রাজি হননি। তারা জমি দিলে সরকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করবে।”
 
banner close
banner close