
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ী।
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হলেও, স্বীকারোক্তিতে নাম আসা কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী এস.এস. আল হোসাইন সোহাগকে রহস্যজনকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, তার পরিবার এবং সাবেক তদন্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ঘটনার পটভূমি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৪ মার্চ কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমাল ক্লাস চলাকালে শিক্ষকের হাতে অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদ করলে, শিক্ষক রায়হান ব্যাগভর্তি অস্ত্রের মধ্য থেকে পিস্তল বের করে তার দিকে গুলি ছোড়েন। গুলিতে আহত হন তমাল। পরে আন্দোলনের মুখে ডা. রায়হান অবৈধ দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই তরবারি, দশটি বার্মিজ ছোড়া ও ৭৮ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার হন।
গ্রেপ্তারের পরদিন আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে শিক্ষক রায়হান অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার হারুন-অর-রশিদের ছেলে এস.এস. আল হোসাইন ওরফে সোহাগের নাম উল্লেখ করেন। গোয়েন্দা পুলিশও তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে। তবে সর্বশেষ তদন্তে ডিবি পুলিশের এসআই নাজমুল হক চার্জশিটে সোহাগের নাম বাদ দেন, যা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ডিবির বর্তমান কর্মকর্তাদের দাবি, রায়হান সোহাগের বিস্তারিত পরিচয় দিতে পারেননি এবং তদন্তে সোহাগের সম্পৃক্ততার সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলেনি। অন্যদিকে মামলার বাদী, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং সাবেক তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, গোয়েন্দা তথ্য ও মোবাইল কথোপকথনের ভিত্তিতে সোহাগের সম্পৃক্ততা আগেই নিশ্চিত করা হয়েছিল। ফলে সোহাগকে বাদ দেওয়াকে তারা "তদন্তের নীতিমালার বাইরে" ও "আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত" বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তমাল বলেন, "শুধু শিক্ষক রায়হান নন, অস্ত্র সরবরাহকারী সোহাগেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।" তমালের পরিবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হানের বাবা, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেছেন, "ভুয়া চিকিৎসা সনদ ও ইমিগ্রেশন নথি ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে আসল অস্ত্র ব্যবসায়ীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।"
কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, "আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই এবং চিকিৎসক রায়হানকেও চিনি না।"
বর্তমানে চার্জশিট আদালতে গৃহীত হয়েছে। তবে পুলিশ সদর দপ্তর ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি জানিয়েছেন, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনে পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
এই ঘটনায় সিরাজগঞ্জের শিক্ষাঙ্গনে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সকলের দাবি—দোষী যারাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
আরও পড়ুন: