রবিবার

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
১৪ আশ্বিন, ১৪৩১
২৫ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

যেসব কারণে অধিকাংশ সংক্রামক রোগের উৎপত্তি আফ্রিকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০:১৭

আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০:২৯

শেয়ার

যেসব কারণে অধিকাংশ সংক্রামক রোগের উৎপত্তি আফ্রিকায়
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের অধিকাংশ সংক্রামক রোগের উৎপত্তি আফ্রিকা মহাদেশে। প্রাণঘাতী প্লেগ, কলেরা, এইডস, হেপাটাইটিস, ফাইলেরিয়া থেকে শুরু করে আজকের দিনের ইবোলা, সার্স, চিকুনগুনিয়া, চিকেন পক্স, মাংকিপক্সের উৎপত্তিও এখানে। পরিসংখ্যান বলছে, সংক্রামক রোগের কারণে প্রতি বছর সারা বিশ্বে  প্রায় দেড় কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে আশি শতাংশেওর বেশি মানুষ আফ্রিকার। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মূলত জলবায়ুর ধরন, জনঘনত্ব, দারিদ্র, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের কারণেই সংক্রামক রোগগুলোর অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে এই মহাদেশ।  

একবিংশ শতকের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর চার ভাগের একভাগই ঘটতো সংক্রামক রোগের কারণে। বার্ষিক অন্তত ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হতো সংক্রামক রোগে, এর অধিকাংশই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে। সংক্রামক রোগগুলো কেবল গণস্বাস্থ্য খাতের ওপরেই নয়, বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বিশাল এক বোঝা। 

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন বলছে, একবিংশ শতকে বড় সংখ্যক সংক্রামক রোগের উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা। এর মাঝে কিছু কিছু রোগের জন্য দায়ী নতুন উদ্ভাবিত অণুজীব। এছাড়া পূর্বে উদ্ভাবিত হলেও ইবোলা, জিকা, চিকুনগুনিয়ার মতো কিছু কিছু অণুজীব আফ্রিকা থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এর বাইরে প্লেগ, কলেরার মতো ঐতিহাসিক রোগগুলোর উৎপত্তিও এখানে। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, সংক্রামক রোগের উদ্ভবের ক্ষেত্রে কোনো একটি অঞ্চলের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও পরিবেশগত উপাদান প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। উষ্ণমণ্ডলীয় আফ্রিকার নিম্ন অক্ষাংশে অবস্থান করা উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে এসব প্রভাবক বেশি মাত্রায় কার্যকর। আফ্রিকার ৫৩টি দেশের মধ্যে ৩৪টিই নিম্ন-আয়ের দেশ। অর্থাৎ এসব দেশের মানুষের গড় আয় ৬শ ডলারেরও নিচে। একই সাথে বিস্তৃত বনজঙ্গলের কারণে বন্যপ্রাণীর মাধ্যমে সংক্রামক রোগের অণুজীব মানুষের শরীরে প্রবেশের ঝুঁকিও বেশি এই অঞ্চলে। সংক্রামক রোগগুলোর ৭২ শতাংশ অণুজীবই বন্যপ্রাণী থেকে আসে। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাণুর অভিযোজনে অনুকূল পরিবেশ, সহজেই অণুজীবে আক্রান্ত হওয়ার হার, জলবায়ু, পরিবর্তিত বাস্তুতন্ত্র, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, দুর্বল স্বাস্থ্যখাত, সামাজিক বৈষম্য, যুদ্ধ, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ- যেসব বিষয় সংক্রামক রোগ বিস্তারের বড় কারণ, তার বেশিরভাগই আছে আফ্রিকায়। এসব কারণেই এই অঞ্চলে থেকে অনেক সংক্রামক রোগের উৎপত্তি, এমনটাই বলছেন তারা। 

ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের তথ্য মতে, বর্তমানে সংক্রামক রোগের কারণে সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে আশি শতাংশেরও বেশি মানুষ আফ্রিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, আফ্রিকায় যেসব সংক্রামক রোগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় এর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে প্রকট শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সংক্রমণ, এইডস, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া ও যক্ষা। এ অঞ্চলে সংক্রামক রোগে মৃত্যুর প্রায় ৮০ শতাংশই ঘটে এসব কারণে। 

সংক্রামক রোগের প্রকটতার কারণে আফ্রিকায় বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। যেমন বতসোয়ানা, সোয়াযিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েতে এইডসে আক্রান্ত মানুষের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল ২৫ থেকে ৩৫ বছর। 

পরিসংখ্যান বলছে, আফ্রিকার মোট মৃত্যুর অর্ধেকই হয় সংক্রামক রোগের কারণে। অন্যদিকে সংক্রামক রোগে ইউরোপে মৃত্যু মোট মৃত্যুর মাত্র ২ শতাংশ। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, আফ্রিকায় সংক্রামক রোগের এই প্রকোপ তাদের একার সমস্যা নয়। এসব রোগ স্বল্পতম সময়েই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে। করোনা মহামারি যার সাম্প্রতিক উদাহরণ। ফলে, সারা বিশ্বের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থেই আফ্রিকার স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে সবাইকে নজর দিতে হবে। একই সাথে এ অঞ্চলে নতুন কোনো অণুজীব বা সংক্রামক রোগের উৎপত্তি হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে জারি রাখতে হবে গভীর নজরদারী।