দুই দফায় ভ্যাট কমানো হলেও বাজারে কমেনি ভোজ্য তেলের দাম। খুলনার বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত তেল ভেঙ্গে করা হচ্ছে খুচরা বিক্রি। নেয়া হচ্ছে বেশি দাম। ভোগান্তিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। তাহলে ভ্যাট ছাড়ের লাভের টাকা কোথায়?
জাতীয় রাজস্ববোর্ড (এনবিআর) এর নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর কমিয়ে করা হয়েছে ৫ শতাংশ। যার ফলে বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমার কথা থাকলেও তা হয়নি। চড়া দামে খোলা বাজারে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায়, সুপার ১৯০ থেকে ১৯৩ টাকায় ও পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮২ থেকে ১৮৭ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও খোলা সয়াবিনের মূল্য ছিলো ১৮৬ টাকা, সুপার ১৮২ টাকা আর পাম তেলের মূল্য ছিলো ১৭৮ টাকা।
নগরীর বাজারগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খুচরা দোকানে বোতলজাত তেলের বড্ড সংকট। কেন এই তেলের এতো সংকট জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে খোলা তেল সংকটের কারণে দাম বেশি হওয়ায় বোতলের তেলের চাহিদা বেড়েছে। ৫ লিটারের সয়াবিন তেল ব্যবসায়ীরা ৮১৮ টাকায়, ২ লিটার ৩৩৪ টাকায় ও ১ লিটার তেল ১৬৮ টাকায় বিক্রি করছেন। পক্ষান্তরে খোলা তেলের মূল্য বেশি।
কিন্তু ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। খোলা তেল বেশি দামে বিক্রি করলেও লাভ কম। অথচ বোতলজাত তেল কম দামে কিনে ভেঙ্গে বিক্রি করছেন খোলা তেলের দামে। তাতে বেশি লাভ পাচ্ছেন। কিন্তু না ভেঙ্গে বিক্রি করলে বডি রেটেই তা বিক্রি করতে হয়। সেখানে লাভ কম হয়। এ কারণেই দোকান থেকে সব বোতল সরিয়ে রেখে সংকট তৈরি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। পরে রাতের আঁধারে বোতল ভেঙ্গে দিনের আলোয় খোলা তেল হিসেবে তা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
নগরীর নিউ মার্কেট কাঁচা বাজার, জোড়াকল বাজার, বানরগাতী বাজার, রুপসা সন্ধ্যা বাজার, ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, দৌলতপুর বাজার, নতুন বাজারসহ খুলনার সব মার্কেটের বর্তমান চিত্র এটি।
খুলনার গল্লামারী বাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদানুযায়ী বাজারে খোলা তেলের আমদানী কম। বেশ কিছু দিন ধরে বোতলজাত তেলের জন্য কোম্পানিগুলোকে অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও তা পাওয়া যাচ্ছে না।
দোকানে তেল কিনতে আসা খুচরা ক্রেতা বেল্লাল হোসেন বলেন, বর্তমানে ভোজ্যতেলের দাম এতো বেশি যে, দিশেহারা হয়ে যাই। মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ আমরা। অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা বাপ্পি খান বলেন, তেল না হলে কোন রান্নাই চলে না। তাই মরি বাঁচি তেল কিনতেই হবে। কিন্তু এর যে দাম! কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা আরিফ হোসেন বললেন, শুনেছি সরকার ভোজ্য তেলের ভ্যাট ছাড় দিয়েছেন। তাহলে দাম কেন কমেনি? উপরন্তু আরও বেড়েছে। ভ্যাট ছাড়ের টাকা তাহলে কার পকেটে?
লুৎফর নামে এক ক্রেতা বলেন, সিন্ডকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে তা আর কমে না। বণিজ্য মন্ত্রানলয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কি করেন? তাদের দায়িত্ব কি?
এ বিষয়ে খুলনায় তেল আমদানীকারক মেসার্স রনজিত ষ্টোরের মালিক রনজিত বলেন, বাজারে খোলা তেলের কোন সংকট নেই। এক মন তেলের বর্তমান মূল্য ৬ হাজার ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। গত দু’দিনের ব্যবধানে আরও ২শ’ টাকা কমেছে। তাহলে তো বাজারে তেলের দাম কমার কথা। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে দুটি মিল যথা সময়ে তেল সরবরাহ না করায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিলো। তবে এখন কোন সমস্যা নেই।
মেসার্স রেজা ব্রাদার্সের মালিক শাহ আলম সরদার বলেন, তেল রিফাইনারী প্রতিষ্ঠানগুলো তেলের মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বাংলাদেশের ৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে কোন একটি প্রতিষ্ঠান ডিও বন্ধ করে দিলেই বেড়ে যায় তেলের দাম।
রুপচাঁদা, তীর ও বসুন্ধরা কোম্পানীর এস আরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে কোম্পানী কোন তেল সাপ্লাই দিচ্ছে না। কিন্তু কেন দিচ্ছে না সেটা তারা বলতে পারছে না। এখন শুধু কোম্পানির অন্যান্য প্রোডাক্ট এর অর্ডার কাটছেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বোতলজাত তেলের নতুন মূল্য সংযোজন করে বাজারে ছাড়বে বলেই কোম্পানির অনলাইনে অর্ডার করে টাকা জমা দিয়েও তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
কনসাস কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের (সিসিএস) নির্বাহী কমিটির সদস্য কামাল মোস্তফা বলেন, কোম্পানী সরবরাহ কমিয়েছে। বোতলজাত তেলের চেয়ে খোলা তেলের দাম বেশি। ফলে কিছু অসাধু খুচরা বিক্রেতা অধিক মুনাফার আশায় বোতলজাত তেল ভেঙ্গে খোলা বিক্রি করছে। এটি একটি সিন্ডিকেট। এই সময়ে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি বা সংকট থাকার কথা নয়। এটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: