বৃহস্পতিবার

২৪ এপ্রিল, ২০২৫
১১ বৈশাখ, ১৪৩২
২৬ শাওয়াল, ১৪৪৬

প্রতি কেজি লবনে কৃষক পায় চার টাকা, বাজারে দাম ৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ০৯:৩৭

শেয়ার

প্রতি কেজি লবনে কৃষক পায় চার টাকা, বাজারে দাম ৪০
কক্সবাজারের মহেশখালীতে বর্তমানে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে বর্তমানে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। এর সঙ্গে লবণ বহনের জন্য শ্রমিকের খরচ ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের টেক্সও পরিশোধ করতে হয় চাষিকে। মণে ১০ কেজি করেও বেশি দিতে হয়। এতে ৫০ কেজি লবণে চাষির পকেটে যায় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। অন্যদিকে এক মণ লবণ উৎপাদনে চাষিদের খরচ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি মণের বিপরীতে তাদের লোকসান ২০০ থেকে ২২০ টাকা আর কেজিতে চার টাকার বেশি।

এদিকে টেকনাফের লবণচাষিদের অবস্থা আরো খারাপ। তারা মণে ১০০ টাকাও পাচ্ছেন না। বর্তমান বাজারে ভোক্তাপর্যায়ে এক কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫২ টাকা পর্যন্ত। লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের দাবি মধ্যস্বত্বভোগীদের জাঁতাকলে পড়ে পথে বসার উপক্রম তারা। বড় বড় মিলমালিক সিন্ডিকেট করে তাদের বড় ধরনের লোকসানের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আমার দেশকে বলেন, এটি এক ধরনের ডাকাতি। মধ্যস্বত্বভোগীরা সবার সামনে এ কাজটি করছে। উৎপাদন ও ভোক্তাপর্যায়ের দামে এত পার্থক্য অন্য কোনো পণ্যে নেই। ফলে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

তবে লবণ বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো বলছে, এক কেজি লবণ প্রক্রিয়াজাত করে ভোক্তাপর্যায়ে নিয়ে যেতে তাদের ৩০ থেকে ৩২ টাকা খরচ হয়। এরপরও অনেক ধরনের খরচ রয়েছে।

লবণচাষি আজগর আলী বলেন, ‘আমাদের খুবই করুণ অবস্থা। ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। কারণ, ৫০ কেজি লবণ বিক্রি করে ১৫০ টাকাও পাচ্ছি না। এমন দুরবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে।’

তবে কক্সবাজার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর এ দাবি সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভিত্তিহীন। চাষিদের কাছ থেকে ১৫০ টাকায় ৫০ কেজি লবণ কিনে প্রক্রিয়া শেষে ভোক্তাপর্যায়ে নিয়ে যেতে কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা খরচ হতে পারে। এতে তাদের কয়েকশ গুণ লাভ থাকে।

কক্সবাজার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খোকন মিয়া বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীরা বিপুল অর্থ লাভবান হলেও কৃষকরা দিনে দিনে পথে বসে যাচ্ছে। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে যে দামে লবণ বিক্রি হচ্ছে তাতে বাজারে ভোক্তাপর্যায়ে দাম সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ টাকা হতে পারে। কিন্তু ৪০ থেকে ৫২ টাকা হয় কী করে?’

মিজানুর রহমান আরো বলেন, মাঠপর্যায়ে দিন দিন লবণের দাম কমছে। এটার জন্য দায়ী মাফিয়া সিন্ডিকেট। চার টাকায় কিনে ৫২ টাকায় বিক্রি করছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সরকারই পারে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে। কারণ, পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যবসা নেই যেখানে চার টাকায় কিনে ৫২ টাকা বিক্রি করা হয়।

এ সময় আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রহস্যজনক কারণে চাষিদের স্বার্থ দেখে না লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক); বরং তারা কিছু ফড়িয়া এবং শিল্প মালিকদের স্বার্থ দেখে।

তবে চাষিদের অভিযোগ নাকচ করে দেন কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের (বিসিক) উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আমরা চাষিদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। দাম বেঁধে দেওয়ার আসলে সুযোগ নেই। বাজারে যেহেতু সরবরাহ বেশি দেখা যাচ্ছে এ জন্য দামটা কমে গেছে।

মধ্যস্বত্বভোগীর বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েকটি পর্যায়ে মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছে। তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। চাষিদের সক্ষমতা বাড়াতে সহজ শর্তে ঋণ দিতে চেষ্টা করছি।

এদিকে গত কয়েক বছরের তুলনায় উপকূলে লবণ চাষ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে ৬৯ হাজার ১৯৮ একর জমিতে লবণ চাষ করছেন ৪১ হাজার ৩৫৫ চাষি। আর দেশে লবণের চাহিদা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। এরই মধ্যে চলতি মাসে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২২ লাখ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু দাম না পাওয়ায় চরম হতাশ চাষিরা।

গত ১০ এপ্রিল জরুরি মতবিনিময় সভা করেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তাদের দাবি, সিন্ডিকেট করে লবণ শিল্পকে ধ্বংস করছে মাফিয়া চক্র। এই চক্রকে ভাঙতে পারবে একমাত্র সরকার। লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানান।

 

banner close
banner close