শনিবার

১২ অক্টোবর, ২০২৪
২৭ আশ্বিন, ১৪৩১
০৮ রবিউছ ছানি, ১৪৪৬

বুয়েট প্রশাসনের যুক্তি হতাশাজনক, আবরারের ভাইয়ের আবেগঘন স্ট্যাটাস

প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:২৬

আপডেট: ৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:৪৬

শেয়ার

বুয়েট প্রশাসনের যুক্তি হতাশাজনক, আবরারের ভাইয়ের আবেগঘন স্ট্যাটাস
নিহত বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ছাব: সংগ্রহীত

ভারতকে নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসের জেরে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের নৃশংস নির্যাতনে খুন হন বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তাকে নির্মম-নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

'আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর হয়ে গেছে। 

৫ই আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পরে দেশের বিভিন্নস্থানে গ্রাফিতিসহ বিভিন্নভাবে আবরার ফাহাদসহ ফ্যাসিস্টদের হাতে সকল শহীদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কিন্তু যেখানে আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছে, সেই বুয়েটেই গত ৫ বছরে তার স্মৃতি রক্ষার্থে ঠিক কী করা হয়েছে ? 

বুয়েটে আসার পরে এ ব্যাপার প্রথম উদ্যোগ নিতে দেখি ১৮ ব্যাচের ভাইয়াদের। তারা একটি বিল্ডিংয়ের নাম আবরার ফাহাদের নামে করার জন্য চেষ্টা শুরু করে। সর্বশেষ প্রস্তাব দেওয়া হয়, বুয়েট সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর নাম আবরার ফাহাদের নামে করার জন্য। এজন্য শিক্ষার্থীদের সাইন কালেক্ট করে আগের প্রশাসনকে দেওয়া হয়। কিন্তু তখন পুনরায় বিস্তারিত তথ্যসহ সাইন নেওয়া ও বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে কালক্ষেপণ করে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু তৎকালীন প্রশাসন এ বিষয়ে নেতিবাচক কোনো মনোভাব প্রকাশ করেনি। 

৫ই আগস্টের পরে সারাদেশের মতো বুয়েটের প্রশাসনেও পরিবর্তন আসে। নতুন ভিসি- প্রোভিসিদের সাথে প্রথম মিটিংয়েই বর্তমান শিক্ষার্থীরা ৭ই অক্টোবরের পূর্বেই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নাম আবরার ফাহাদের নামে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বুয়েট প্রশাসন সরাসরি জানিয়ে দেয়, “কোনো শহীদের নামে কোনো ভবনের নামকরণ করা যাবেনা কারণ পরবর্তীতে অন্য সরকার এসে নাম পরিবর্তন করে দিতে পারে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বুয়েটের শহীদ শিক্ষার্থীদের পরিবার এসেও একইরকম দাবি জানাতে পারে। তাই আবরার ফাহাদের নামে লাইব্রেরীর নাম করা যাবেনা। তবে হলে স্মৃতিফলক করার ক্ষেত্রে উনাদের আপত্তি নেই।” উল্লেখ্য যে, ২০০২ সালে ছাত্রদলের দুইপক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হওয়া সাবেকুন নাহার সনি আপুর নামে বুয়েটের ছাত্রী হলের নামকরণ করা হয়েছে। 

যদিও আমি এ ব্যাপারে সরাসরি জড়িত নই, কিন্তু যেখানে আওয়ামী লীগ সরকারই আবরার ফাহাদ নিয়ে কোনো বিতর্ক করেনি, সেখানে এতকিছুর পরে অন্য সরকার এসে নাম পরিবর্তন করবে বুয়েট প্রশাসনের এমন যুক্তি দেওয়াটা রীতিমতো হতাশাজনক।'

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নৃশংস কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করে সংগঠনটির ক্যাডাররা। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

দেশব্যাপী আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে ওঠে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি। পরে খবরে আসে, সেই ২০১১ নম্বর রুমটিকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করতো ছাত্রলীগ। সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই রুম থেকে নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি, স্ট্যাম্প, রড, চাকু ও দড়ি উদ্ধার করেছিল ডিবি পুলিশ। 

এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। দায়ের হয় হত্যা মামলা। ওই মামলায় সব মিলিয়ে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এরমধ্যে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।